পদ-পদোন্নতিসহ চাকরিসংক্রান্ত নানা দাবিতে এখন পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে সরকারি চাকরিতে আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব বাড়ছে।

দাবি নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের বড় জমায়েতের এক দিনের ব্যবধানে আজ মঙ্গলবার এক ঘণ্টার ‘কলমবিরতি’র মাধ্যমে প্রকাশ্যে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। পর্যায়ক্রমে তাঁরা মানববন্ধন ও সমাবেশও করতে চান।

২৫ ক্যাডারের মধ্যে কর্মকর্তার সংখ্যার দিক দিয়ে বড় ক্যাডার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার। এই দুই ক্যাডারে কর্মকর্তা রয়েছেন যথাক্রমে প্রায় ১৬ হাজার ও ৩০ হাজারের বেশি। তাঁদের ক্যাডারের বাইরে রাখার সুপারিশের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছেন এই দুটি ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দুটি দাবি জানিয়েছে। তাঁদের প্রথম দাবি হলো, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী পদে স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, উপসচিব পুলে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হবে। আর শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকেও আজ আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের দাবি জানানোর কথা রয়েছে।

নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আগে থেকেই সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ছিল। এর মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সম্ভাব্য কিছু সুপারিশ সামনে আসার পর এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। এই সুপারিশ নিয়ে মোটাদাগে এক পক্ষে আছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অন্য পক্ষে আছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য, পোস্ট ও মন্তব্য করা হচ্ছে।

বর্তমানে প্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব হতে পারেন। উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়। বর্তমানে কর্মরত উপসচিবের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬০০।

এমন সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে প্রশাসন ক্যাডারের পদোন্নতির কোটা কমে যাবে বলে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এই ক্যাডারে কর্মকর্তা রয়েছেন ছয় হাজারের বেশি। তাঁদের এখন দাবি, সহকারী কমিশনার (শুরুর পদ) থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত পদগুলোর সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অর্থাৎ প্রশাসনের শতভাগ পদ হতে হবে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য। এ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের দাবিতে গত রোববার সচিবালয়ে বড় জমায়েত করেন। দাবির বিষয়টি নিয়ে কমিশন তাদের সঙ্গে বসবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সচিবালয়ে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দাবি আদায়ে সামনের দিনেও সরব থাকবেন।

8 thoughts on ““সরকারি কর্মক্ষেত্রে আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব: সমাধানের খোঁজে প্রশাসন””

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *