লেখকঃসালেক সুফী।।
পলিসি প্রণয়নকারীরা স্বীকার করুক নাই বা করুক সুধীজন জানে বাংলাদেশের জ্বালানি নীতি বা কৌশল স্বাধীন চিন্তার ফসল নয় ।বাংলাদেশ আজ বঙ্গবন্ধুর স্বনির্ভর জ্বালানি দর্শন থেকে বহুদূরে। অনেকেই বলবেন বাংলাদেশের জ্বালানি কৌশল অনেকটাই প্রতিবেশী প্রভাবিত। নাহলে কেন সীমান্ত সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ ,ঝাড়খন্ড গন্ডোয়ানা বেসিন থেকে কয়লা উঠিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও ৫ টি আবিষ্কৃত উন্নতমানের কয়লা ক্ষেতের সম্পদ নিয়ে সিদ্ধান্তহীন বাংলাদেশ? কেন সাগৰ সীমায় গ্যাস তেল প্রাপ্তির ওপর সম্ভাবনা নিয়ে নিষ্ক্রিয় বসে আছে? কেন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস তেল প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকলেও অনুসন্ধান হচ্ছে না? কেন ভুটান নেপাল থেকে জল বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ কাগুজে আলাপে সীমাবদ্ধ ? বাংলাদেশকে কেন আদানি গ্রুপের আমদানি নির্ভর কয়লা দিয়ে ঝাড়খণ্ডে নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে একপেশে চুক্তির অধীনে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে? এগুলো প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করলেই জবাব মিলবে একধরণের জ্বালানি মাফিয়া সিন্ডিকেট চায় বাংলাদেশের জ্বালানি বিদ্যুৎ খাত সম্পূর্ণ ভাবে বিদেশ নির্ভর বা` খাঁটি কথায় প্রতিবেশী দেশ নির্ভর হয়ে যাক।
বঙ্গবন্ধু কিন্তু স্বনির্ভর জ্বালানি বিদ্যুৎ খাত গড়ে তোলার জন্য বিওজিএমসি ( পরবর্তীতে বিওজিসি) , বিএমডিসি ,বিপিডিবি গড়ে তুলেছিলেন। এখন বিএমডিসি অস্তিত্বহীন , নাম মাত্র আছে আমলা নিয়ন্ত্রিত দুর্বল পেট্রোবাংলা। বিপিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন আমদানিকৃত জ্বালানি নির্ভর। বিশাল সাগরের গ্যাস অনুসন্ধান স্থবির। বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে, অচিরে শুরু হবে তরল জ্বালানি আমদানি। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও সবেধন নীলমনি ইস্টার্ন রিফাইনারি ক্ষমতা বাড়ে নি বা দ্বিতীয় রিফাইনারি স্থাপন করা হয় নি। বঙ্গবন্ধুর দর্শন থেকে যোজন যোজন দূরে বাংলাদেশ। অচিরেই হয়তো ভারত থেকে গ্যাস আমদানি করবে বাংলাদেশ।
আমরা যখন ১৯৯০ বা ২০০০ দশকে জ্বালানি সেক্টরে কাজ করেছি অন্তত প্রাকৃতিক গ্যাস খাতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে ছিল।ভারত বাংলাদেশ থেকে গ্যাস আমদানিতে আগ্রহী ছিল ।মায়ানমার থেকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারত পাইপ লাইন দিয়ে গ্যাস আমদানি করতে চেয়েছিলো। ভারতের টাটা কোম্পানি বাংলাদেশে ইস্পাত কারখানা , বিদ্যুৎ ,সার কারখানা করতে উদ্যোগী ছিল। ওরা বড়পুকুরিয়া বা ফুলবাড়ী কয়লা খনি চেয়েছিলো। বলা বাহুল্য কোনোটাই আলোর মুখ দেখেনি। বরং অনেকের মতে ষড়যন্ত্র করে কয়লা উত্তোলন স্থগিত আছে বড়পুকুরিয়া ছাড়া সব কয়লা খনিতে। নিজেদের গ্যাস সম্পদ উন্নয়নে শামুক গতি. আমদানিকৃত জ্বালানির মরীচিকার পেছনে ছুটছে বাংলাদেশ।
অচিরেই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু দর্শনের ভিত্তিতে স্বনির্ভর জ্বালানি নীতি প্রণয়ন না করলে কখনোই বাংলাদেশ দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জন করবে না। দুরূহ হবে ভিশন ২০৪১ অর্জন।