সালেক সুফী।।
কৃতকল্প ,দৃঢ়চেতা , সৃজনশীল এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে লক্ষ্যের পানে অবিচল আস্থা নিয়ে এগিয়ে যাবার মহান নেতা সুলভ সবধরণের বৈশিষ্টের অধিকারী চৌধুরী মোহাম্মদ মহসিন আমার গ্যাস সেক্টর কর্ম জীবনের আদর্শ ,অনুকরণীয় ব্যাক্তিত্ব। মানুষটির অসামান্য সাহসী এবং গতিশীল নেতৃত্বে বিজিএসল নামের ভার্টিকালি ইন্টিগ্রেটেড ( উৎপাদন, সঞ্চালন ,বিতরণ , বিপণন ) কোম্পানিটি বিন্দু থেকে বৃত্তে পরিণত হয়েছিল গ্যাস ক্ষেত্র উন্নয়ন, সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের অনেক মাইলফলক স্থাপন করে। কুমিল্লা ক্লাবের সার্ভেন্টস কোয়ার্টার থেকে সূচিত বিজিএসএল আজ সমগ্র দক্ষিণ পূর্ব বাংলাদেশে কর্ণফুলী গ্যাস এবং বাখরাবাদ গ্যাস নামের দুটি কোম্পানির মাদ্দমে জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তার রূপকার এবং বাস্তবায়নকারী ব্যাক্তিত্ব জনাব মহসিন নামের সপ্রতিভ মানুষটি। ওনাকে চিনি সেই ১৯৭৬ -৭৭ বুয়েটে পড়াকালীন সময় থেকেই। বুয়েট জিমনেসিয়ামে উনি স্কোয়াশ খেলতে আসতেন। পারিবারিক ভাবে ঘনিষ্ট ছিলাম। তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে যোগদানের পর সম্পর্ক ঘনিষ্ট হয়েছিল। উনার উৎসাহে ১৯৮১ কুয়েতে তেল শোধনাগারে চাকুরীর স্বভাবনা পায়ে দলে ঢাকায় ক্রীড়াঙ্গনের মোহো ছেড়ে এক ঝাঁক ভোরের পাখির সংগে যোগ দিয়েছিলাম বাখরাবাদ -চট্টগ্রাম পাইপ লাইন নিরাম নামের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে। যারা দেখেছে তারা জানে মহসিন ভাইয়ের উপমধর্মী নেতৃত্বে সকল বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে ১৯৮৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে প্রকৃতিক গ্যাস পৌঁছেছিল চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট। চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে প্রথম গ্যাস জ্বলেছিল উনার হাতের ছোয়ায়। উপস্থিত ছিলাম। উনার নেতৃত্বে চট্টগ্রামের নগরীর চারপাশে বৃত্তাকার গ্যাস পাইপলাইন ,বড় বড় শিল্প কারখানা গুলোতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছিল। এছাড়া দক্ষিণ পূর্ব বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় গ্যাস সরবরাহের মদ্ধমনি ছিলেন মহসিন ভাই.।আমি জীবনে কয়েকজন শ্রেষ্ট মুক্তি যোদ্ধা নেতাকে কাছে থেকে দেখেছি। আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর জেনেরালদের সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ হয়েছে কিন্তু উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফেনী নদী ক্রসিং এবং কর্ণফুলী নদী ক্রসিংয়ের মহসীন ভাইকে আমি শুধু রণাঙ্গনের বীর খালেদ মোশাররফের সঙ্গেই তুলনা করবো।
এখানেই থেমে নেই উনার নেতৃত্বে বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় নর্থ -সাউথ প্রকল্পের অধীনে বিয়ানীবাজার ,কৈলাশটিলা , রশিদপুর ,হবিগঞ্জ ,তিতাস , নরসিংদী ,মেঘনা গ্যাস ক্ষেত্র্রে গ্যাস কূপ খনন হয় , সিলেটের গোলাপগন্জ থেকে বারহমানববাড়িয়ার আশুগঞ্জ পর্যন্ত ১৭৮ কিলোমিটারগ্যাস পাইপলাইন এবং সমান্তরালে তরল পেট্রোলিয়াম পাইপ লাইন নির্মিত হয়।
তাঁর কর্মদক্ষতার কারণে ঈর্ষান্বিত একমহল তাকে পরিচালকের পদ থেকে রুগ্ন বাপেক্সের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দিলেও তাঁর হাতের ছোয়ায় পান জন্ম হয় বাপেক্সের। এর পর সরকার তাকে বিশেষ ব্যাবস্থায় যুগ্ম সচিব করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে বদলি করে। তাঁর সময়ে যমুনা বহুমুখী সেতুর সূচনা হয়।একপর্যায়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক বিশেষ সরকারি দপ্তরের মহাপরিচালক থাকা অবস্থায় মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়. একসময় তিনি এক্সটেরানল রিসোর্সেস ডিভিশনের অতিরিক্ত সচিব এবং বিমান চলাচল এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। মাগুরছড়া গ্যাস অগ্নিকাণ্ডের পর সরকার জ্বালানি মন্ত্রণালয় ভেঙে জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ দুটি বিভাগ করে জনাব মহসিনকে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেয়ার চিন্তা করে। কিন্তু ব্যাড সাধে আমলারা। তাঁকে পেট্রোবাংলায় প্রেরন করা হয়। সেখান থেকে নিরবে নিভৃতে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
আমি জীবন বাজি রেখে বলতে পারি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দুস্সময়ে তিনি নেতৃত্বে থাকলে গ্যাস সেক্টর বহুগুনে বিকশিত থাকতো। তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠাগুলো আজ সঙ্গিন অবস্থায় থাকতো না।ডিসেম্বর ২০২২ বাংলাদেশ সফরের সময় দেখা হয়েছে। স্বাধীনতার স্বপক্ষের এই মানুষটিকে সঠিকভাবে কাজে না লাগানো বর্তমান সরকারের বিশাল ব্যার্থতা বলে মনে করি।