সালেক সুফী।।
বরাবরের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সোমবার ঢাকায় তাঁর সম্প্রতি জাপান , যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্র সফর বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেন। সম্মেলনে বিভিন্ন কার্যক্রম বিষয়ে বর্ণনার পাশাপাশি তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মত প্রকাশ করেছেন যা বিদ্যমান ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আলোচনার দাবি রাখে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যারা বাংলাদেশকে নিষেধাজ্ঞা দিবে তাদের কাছ থেকে কিছু না কেনার জন্য তিনি নির্দেশ দিবেন। তিনি আরো বলেছেন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নাই। দেশে প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আছে. নির্বাচন কালে সরকার গঠন বিষয়ে তিনি পার্লিয়ামেন্টে থাকা সকল রাজনৈতিক দলের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনার কথা বলেছেন। ঘূর্ণিঝড় মখার কারণে এলএনজি আমদানি ব্যাহত হওয়ায় দেশজুড়ে গ্যাস বিদ্যুৎ সংকট নিয়েও তিনি কথা বলেছেন। সরকার প্রধান দেশের সকল বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন নির্দেশিকা এবং বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ করেন বিধায় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর তিনটি কথাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ: সবাই জানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথিত অভিযোগে বাংলাদেশের একটি বিশেষ বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছে। সেই বিষয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে নানা আলোচনা পর্যালোচনা চলছে। জানা মোতে প্রধানমন্ত্রী ব্যাক্তিগত ভাবেও এই বিষয়ে সংশ্লিট পর্যায়ে কথা বলেছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী নিদৃষ্ট ভাবে কোনো দেশের কথা বলেন নি তবুও প্রকারন্তরে প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি কাদের উদ্দেশো সেটি সহজেই অনুমেয়। বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামান্য পণ্য আমদানি করে থাকে। অপরদিকে বাংলাদেশ সেদেশে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে। যদি বাংলাদেশ সত্যি আমেরিকা থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ করে তাহলে প্রতিক্রিয়ায় যদি আমেরিকা বাংলাদেশ থেকে আমদানি স্থগিত করে কি অবস্থা দাঁড়াবে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের? তাছড়া প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিগত সফরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদ্দাত্ত আহবান জানিয়েছেন। এক্সক্সন মোবিল এবং শেভ্রনের স্বতঃপ্রণোদিত প্রস্তাবের ভিত্তিতে জ্বালানি অনুসদ্ধানে চুক্তি সম্পাদনে আলোচনা বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী কথাটি এভাবে সাংবাদিক সম্মেলনে না বললেও পারতেন। কিছু কিছু স্ট্রাটেজিক বিষয়ে সব সময়ের বলা প্রাসঙ্গিক না। জনগণ ভুল ইঙ্গিত পায়।
বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতামত কিন্তু বাস্তবে প্রতিফলন হচ্ছে না। আমদানি নির্ভর জ্বালানি খাতের জন্য কয়লা ,গ্যাস ,তরল জ্বালানি আমদানি এবং ক্ষেত্র বিশেষে নিত্য পণ্য আমদানি কিন্তু ডলার সংকটের ধুয়া তুলে প্রভাবিত হচ্ছে। জ্বালানি সংকটের কারণে কিন্তু শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রভাব পড়ছে। বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর মতামত জানা যাচ্ছে না। বিশ্ব মন্দার প্রেক্ষিতে কৃচ্ছতার প্রয়োজন আছে ,সংরক্ষণশীল হওয়ার কৌশল ঠিক আছে। সরকারের অগ্রাধিকার নির্ধারণ জরুরি।
নির্বাচন কালীন সরকার গঠন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক সেটি সবাই চায়। কিন্তু বর্তমান পার্লিয়ামেন্টে যেহেতু প্রধান বিরোধী দল নেই তাই সরকারের অংশীদার কয়েকটি প্রান্তিক দলের প্রতিনিধি নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা না থাকা খুব কিছু যাবে আসবে না।তবে এটি ধরে নেয়া যায় নির্বাচন কোন্সিটিটিউশন অনুযায়ী হবে। সেক্ষত্রে কিভাবে নির্বাচন অংশগ্রহণ মূলক এবং জনগণের আস্থা সৃষ্টি করে করা যায় সেবিষয়ে আলাপ আলোচনা হওয়া জরুরি।
জ্বালানি সংকট নিয়ে অনেক কিছুই করার আছে।মখা ঘূর্ণিঝড়ের আগে থেকেই দেশে জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট চলছে। ১৫ বছরে বর্তমান সরকারের শাসন আমলে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও সেই উন্নয়ন কেন টেকসই হলো না সেটি নিয়ে কিছু মৌলিক সিদ্ধান্ত নেয়ার অবকাশ আছে। নিজেদের গ্যাস ,কয়লার সর্বোত্তম ব্যবহার বিষয়ে সরকার যথাযথ উদ্যোগ নিতে বার্থ হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন বিষয়ে প্রকৃতপক্ষে সামান্য কাজ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কেন জ্বালানি সেক্টর স্বনির্ভর হচ্ছে না সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রয়োজন। আমদানি নির্ভর জ্বালানি নীতি বাংলাদেশ অর্থনীতির জন্য উপযোগী নয় এটি আর প্রমানের কি আছে. জনগণ সরকারের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নীতি দেখার অপেক্ষায়।