সালেক সুফী ।।
বৈষয়িক উষ্ণতা বৃদ্ধি থেকে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশ্ব মানবতার অস্তিত্ব বিপন্ন করার প্রেক্ষাপটে ২১০০ নাগাদ উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে সীমিত করার অঙ্গীকারে প্যারিস ক্লাইমেট এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ সহ দুনিয়ার অধিকাংশ দেশ. প্রতিটি দেশ এই কারণে নিজ নিজ দেশে কার্বন নিঃস্বরণ কমাতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ন্যাশনালী ডিটারমাইন্ড কান্ট্রিবিউশন ( NDC ) আকারে অন্নান্য দেশের মত বাংলাদেশের অঙ্গীকার আছে নিদৃষ্ট সময়ের মাঝে নিদৃষ্ট মাত্রায় নিঃস্বরণ কমিয়ে আনার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি। তিনি অঙ্গীকার করেছেন ২০৪১ নাগাদ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০% আসবে নবায়ন যোগ্য জ্বালানি থেকে। ২০০৮ পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ২০২০ নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান থাকার কথা ছিল ১০% ।
কিন্তু ২০২৩ এসে এটি দাঁড়িয়েছে সবে মাত্র ৩%।দেশে নীতির অভাব নেই। কিন্তু নীতি বাস্তবায়নের কৌশলের অভাব রয়েছে। পলিসি মেকার্সদের মানসিকতা উপযোগী কিনা প্রশ্ন রয়েছে। ফসিল ফুয়েল লবির দুষ্ট প্রভাবে অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সৌর বিদ্যুৎ আর বায়ু বিদ্যুতের প্রসার ঘটছে না. এমনিতেই জীবাস্ম জ্বালানি নির্ভর বাংলাদেশের জ্বালানি খাত সরকারি ভুল কৌশলের কারণে নিজেদের জ্বালানি সম্পদ আহরণ এবং উন্নয়ন অবহেলা করে আমদানি নির্ভর হয়ে তীব্র সংকটে। করোনা অতিমারীর এবং এর পর ইউক্রেন যুদ্ধের অশুভ প্রভাবে বিশ্ব জ্বালানি বাজার বিক্ষুব্ধ। নড়বড়ে অর্থনীতি নিয়ে বাংলাদেশে জ্বালানি আমদানি নিয়ে ডলার সংকটে হ্যাশ ফাঁস করছে। অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশের সুযোগ আছে সকল নীতি কৌশল সমন্বিত করে দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান বৃদ্ধি।
ক্ষতিকর গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড সহ অন্নান্য গ্রীন হাউস গ্যাস যথেচ্ছ নিঃস্বরনের কারণে বৈষয়িক উষ্ণতা বৃদ্ধি দুনিয়া জুড়ে নিয়মিত ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশের কার্বন নিঃস্বরণ তুলামূলক ভাবে কম হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ. প্রতিবছর ঝড় ,বন্যা এবং মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড় হয়ে যান মালের ক্ষয় ক্ষতি হচ্ছে।
বাংলাদেশের নবায়ন যোগ্য জ্বালানি নীতি হালনাগাদ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এখন সমন্বিত জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান করা হচ্ছে। সরকারের NDC অঙ্গীকার আছে , ডেল্টা প্ল্যান এবং মুজিব ক্লাইমেট প্রসপেরিটি পরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নের কথা বলা আছে. এগুলো সমন্বয় করে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োন এবং বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ করে অচিরে উচিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি রোড ম্যাপ প্রণয়ন।
অনেকে মনে করেন দেশে বোরো ধরণের সোলার বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের জন্য জমির প্রাপ্যতার অভাব। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক এটি স্টাডি রিপোর্টে মাতারবাড়ি ,মহেশখালী এবং পটুয়াখালীর ইতিপূর্বে কয়লা বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের জন্য অধিকৃত স্থান সহ জামালপুরে একটি স্থানেবড় আকারে সৌরর বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের সুপারিশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী এগুলো স্থানে পর্যায়ক্রমে ৮০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে ২০২৬ নাগাদ ৩৮০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন করা যেতে পারে। মুজিব ক্লাইমেট প্রসপেরিটি পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ নাগাদ বিশাল ভূমি রিক্লেম করবে বাংলাদেশ। সেখান থেকে ৫% জমি সোলার বিদ্যুতের জন্য বরাদ্দ দেয়া যায়. বাংলাদেশের সকল শিল্প কারখানার চাদ সোলার বিদ্যুতের জন্য আদর্শ স্থান। নেট মিটারিং সুবিধা রুফ টপ সোলার স্থাপনের দুয়ার খুলে দিয়েছে।
পাশাপাশি সরকারি সব ভবন ,স্কুল , কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয় ,হাসপাতাল , কমিউনিটি ক্লিনিকের ছাদে পরিকল্পনা করে সোলার বিদ্যুৎ প্যানেল বসানোর আন্দোলন সৃষ্টি করা যেতে পারে। পাশাপাশি বায়ু বিদ্যুৎ থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। কেন বাংলাদেশের অধিকাংশ সেচ পাম্প সৌর বিদ্যুৎ নির্ভর করে বিলম্ব? কেন ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না? বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জলসীমায় বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।
বাধাগুলো হলো সরকারের নীতি নির্ধারকদের মানসিকতা , সরকারের শুল্ক বাধা এবং নবায়ন যোগ্য জ্বালানির ট্যারিফ বাস্তব সম্মত করা। সঙ্গে সঙ্গে স্রেডার সংস্কার করে এটিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রধান দায়িত্ব অর্পণ করা উচিত। যেহেতু এখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের সম্পৃক্ততা আছে তাই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করাও জরুরি।
আমি মনে করি বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশকেও পর্যায়ক্রমে জীবাস্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সরে আসতেই হবে. কেন এটির দ্রুত প্রসার ঘটছে না , বাধা গুলো কোথায় মোটামুটি সেগুলো সুস্পষ্ট। জাতীয় স্বার্থে সেগুলো অপসারণ করে এই বিষয়ে একটি জাতীয় আন্দোলন সৃষ্টি করা হলে ২০৪১ নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে ৪০% যোগান না পাওয়ার কোনো যুক্তি সঙ্গত কারণ নাই।
priligy tablets price Hypertension Resistant Hypertension Diagnosis, Evaluation, and Treatment