সালেক সুফী।।
নানা কারণেই আমাদের ১০ বাংলাদেশির পচিম ইউরোপে প্রশিক্ষণ ব্যাক্তিগত জীবন এবং বাংলাদেশের জ্বালানি সেক্টরে পদচিহ্ন রেখেছে। আমি নিজে পরবর্তীতে দেশে বিজিএসএল , জিটিসিএল এবং বিদেশে অস্ট্রেলিয়া , থাইল্যান্ড , আফগানিস্তান , কাতার কাজ করার সময় হল্যান্ড অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছি। আবেদীন বিজিএসএল , বিজিএফসিএল ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এবং পেট্রোবাংলার পরিচালক হয়ে অবসর নিয়েছে। এখনো একটি শীর্ষ ব্যাক্তিখাতের গ্যাস কোম্পানিতে কাজ করছে। জামিল একই ভাবে বিজিএসএল ব্যাবস্থাপনা পরিচালক , পেট্রোবাংলার পরিচালক হয়েছে। সানোয়ার নতুন ভাবে গঠিত কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি , পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস, রূপান্তরিত গ্যাস ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে কাজ করার পর পেট্রোবাংলার পরিচালক হয়ে অবসর নেয়ার পর এখন ব্যাক্তিখাতের একটি গ্যাস কোম্পানিতে কাজ করছে। রফিকুর রহমান ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হয়ে কাজ করার পর অবসরে। হাসান বিজিএসএল মহাব্যবস্থাপক হবার পর স্বেচ্ছা অবসর নিয়েছে। কাসেম এবং সাহাবুদ্দিন দেশে ফিরে কিছু দিন কাজ করার পর এখন কানাডা প্রবাসী। শুনেছি জালালাবাদের জামিল প্রবাসে আছে. গুলজার ভাই ক্যালগারিতে প্রবাস জীবনে মৃত্যু বরণ করেছে।
জুড লরেন থেকে প্রতিদিন সকালে উঠে প্রাতরাশের পর যখন অফিস যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠতাম বরফ ঢাকা গাড়ি পরিষ্কার করে গাড়িকে প্রস্তুত করতে সময় লাগতো। তার পরেও আমরা প্রতিদিন সময় মতো পৌছাতাম গ্যাসুনি হেড অফিস। ডাচরা খুব অতিথি পরায়ণ। প্রতি মানুষ আমাদের অবস্থান আকর্ষণীয় করার করার জন্য তৎপর ছিল. প্রতিদিন কোননা কোনো উপহার পেতাম। আমার সঙ্গে পরিচালক অপেরেশনের সঙ্গে বন্ধুর সম্পর্ক গড়ে উঠে. অনেক সময় কাটে বেসমেন্টে থাকা স্কাডা কন্ট্রোল সেন্টারে। স্যাটেলাইট পরিবাহিত স্কাডা সিস্টেম নরওয়ে থেকে গ্যাস লাইন সহ নেদারল্যান্ডের সব গ্যাস ফিল্ড সমূহ থেকে গ্যাস সরবরাহ, এবং সকল এক্সপোর্ট স্টেশন দিয়ে জার্মানী ,বেলজিয়াম , সুইজারল্যান্ড এবং ফ্রান্সে গ্যাস রপ্তানি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতো। এছাড়া সকল কম্প্রেসসর স্টেশন ,মিক্সিং স্টেশন মনিটরিং করা হতো।পরবর্তীতে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা জিটিসিএল স্কাডা সিস্টেম গড়ে তুলেছিলাম। আমি নিজে জিটিসিএল স্কাডা সিস্টেম ব্যবহার করে ২০০৩-০৫ বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন গ্রিড স্বস্তিতে পরিচালনা করেছি।
প্রশিক্ষণ থেকে জেনেছিলাম যখন কোনো গ্যাস সঞ্চালন ব্যাবস্থায় বিভিন্ন মানের ( গ্যাস কম্পোজিসন এবং হিটিং ভ্যালু ) গ্যাস সরবরাহ করা হয় সেখানে প্রতিক্ষেত্রেই মিক্সিং স্টেশন করে গ্যাসকে একই গুনাগুন সম্পন্ন করা হয়।বাংলাদেশের উচিত আরএলএনজি এবং গ্রিড গ্যাস মেশানোর মহেশখালী সিটিএমএস মিক্সিং স্টেশন সংযোজন। গাসুনি প্রতিটি গ্যাস রেগুলেটিং এবং মিটারিং স্টেশনে অনলাইন ক্যালিব্রেশন ব্যবস্থা সংযোজন করেছিল। প্রতিটি গ্যাস ইনলেট স্থানে অনলাইন ক্রোমাটোগ্রাফ ছিল। আমাদের বেশ কয়েকটি স্টেশন পরিদর্শনে নেয়া হয়েছিল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল হল্যান্ড জার্মান সীমান্তে একটি এক্সপোর্ট স্টেশন পরিদর্শন। সেখানে জার্মান প্রকৌশুলীরা মাসিক যৌথ মিটার ক্যালিব্রেশনে এসেছিলো। ওদের আলাপে জেনেছিলাম কিভাবে সীমান্তের কাছাকাছি থাকা গ্যাস ,তেল ক্ষেত্রগুলো কিভাবে জয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট এগ্রিমেন্টের আওতায় উন্নয়ন এবং পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ -ভারত এবং বাংলাদেশ -মায়ানমারের জল ,স্থলের সীমান্ত সংলগ্ন ব্লকগুলোর উন্নয়নে যৌথ ডেভেলপমেন্ট চুক্তি করা যেতে পারে।
আমরা পচিম ইউরোপের সবচেয়ে বিশাল ওমেন কম্প্রেসর স্টেশন করেছিলাম। স্টেশনটির নিবিড় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমাদের চোখে পড়েছিল। স্টেশনের বাউন্ডারি ফেন্সের চারপাশে পরিখা খনন করে দুর্গম করা হয়েছিল। বাউন্ডারি ওয়ালের উপর কাটা তারের বেড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিলবড়ো গাছে প্রশিক্ষিত কুকুর বাহিনী ছিল। এর পরেও আমাদের ভয়েস আইডি চেক করে অনুপ্রবেশ করানো হয়েছিল। কম্প্রেসসর স্টেশন নরওয়ে থেকে আমদানিকৃত গ্যাস , নর্থ সি ( North Sea ) থেকে সঞ্চালিত গ্যাস কমপ্রেস করা হতো। এখানে আমরা এলএনজি প্লান্ট দেখেছিলাম। ইনলেট ১০ টি পাইপ লাইন এবং আউট লেটে ১৬ টি পাইপলাইন ছিল।শুনেছি আলজেরিয়া থেকে কমান্ডো বাহিনী একবার এখানে অন্তর্ঘাতী তৎপরতা চালাতে এসেছিলো। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাবেল টাইট করা ছিল। আমাদের আশুগঞ্জ ম্যানিফোল্ড স্টেশন সহ গ্যাস বিদ্যুৎ সেক্টরের কেপিআই গুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজন আছে।
আমাদের মাঝে সাগর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখান থেকে সাগরতীরে গ্যাস প্রসেসিং প্লান্টে বসে দূর সাগরে প্রোডাকশন প্লাটফর্ম দেখতে পেতাম। সাগর পাড়ে দেখতাম ডাচ তরুণীরা সীল মাছের বাচ্চাদের কোলে তুলে সীল হাসপাতালে নিয়ে যেত।এই বাচ্চাগুলো কোনোভাবে মাতৃহারা হয়ে সাগর পারে এসে মানব শিশুর মতোই কান্না করতো। ডাচ তরুণীরা এগুলোকে হাতপাতালে নিয়ে যেত সুশ্রষার জন্য। দুই এক সপ্তাহ পরে ওদের এনে আবার সাগরে ছেড়ে দিতো।
আমরা এমন চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। বিশাল চিড়িয়াখানায় অনেক দেশের পশুপাখি নিজ নিজ দেশের কৃত্তিম আবহাওয়া তৈরী করে রাখা হয়েছিল। আমরা মরুভূমির উঠ , অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারু, পোলার বিয়ার ,এমনকি বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখেছি। আমাদের বাংলার বাঘের সামনে দাঁড়িয়ে রীতিমত উৎসুক দর্শকদের বাংলাদেশ নিয়ে নাতিদীর্ঘ বর্ণনা দিয়েছিলাম। মজার ঘটনা হলো একটি বড় গাছে লম্বা লেজের কালো বানর দেখলাম। ওরা আমাদের ১০ বাংলাদেশী দেখে স্বজাতি ভেবে আনন্দে নাচতে নাচতে নিচু ডালে ছুতে এসেছিলো।
ফেব্রুয়াটি ১০ ঢাকা থেকে সংবাদ এলো আমার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়েছে। সাহসী রোজি একাই মালিবাগ বাসা থেকে অলকেশ দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করে গাড়ি জোগাড় করে হোলি ফ্যামিলি হসপিটালে যায়। সেখানে জন্ম হয় আমার দ্বিতীয় সন্তান খন্দকার শাফায়েত শাহরিয়াজ ( অভ্র)। আমার দুর্ভাগ্য দুটি সন্তানের জন্মের সময় আমি অনেক দূরে ছিলাম। ছেলে দুটির নাম আমার মায়ের দেয়া। কাকতলীয় ভাবে তখন ডাচ টেলিভিশনে অভ্র নাম একটি সিরিয়েল চলছিল। ডাচরা শিশুদের খুব পছন্দ করে। ওরা অনেকেই ফুল নিয়ে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছিল।
ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ থেকেই টিউলিপ ফুটতে শুরু করলো। কিছু দিনের মাঝেই টিউলিপের রঙিন আভায় তুলিপময় হয়ে উঠলো চারিদিক। একসময় আমাদের গ্রনিজেন পর্ব শেষ হয়।আমাদের ডেভেনটার ভেগ গ্যাস ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণের পরবর্তী পর্বের জন্য পাঠানো হয়।আমরা কাকলহফ নামের ফরেস্ট বাংলো পার্কে থাকতাম মারিয়া নামের একজন মাতৃময়ী ডাচ মহিলার আবাসন ব্যাবস্থায়।
চলবে।
And IГў ve never liked that kind of division amazon priligy 7 months with the ribociclib regimen among patients who had received a nonsteroidal aromatase inhibitor compared with 47