সালেক সুফী।।
১৯৮৫ বিজিএসএল সফল প্রধান নির্বাহী মহসিন ভাইকে পেট্রোবাংলার বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়ন সেল প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিট (পিআইইউ ) পরিচালক করে বিদেশী সংস্থার আর্থিক সহযোগিতা পুষ্ট উত্তরাঞ্চলের গ্যাস ক্ষেত্রসমূহের উন্নয়ন এবংবিয়ানীবাজার থেকে কৈলাশটিলা হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পর্যন্ত গ্যাস এবং সমান্তরালে কনডেনসেট পাইপলাইন ( উত্তর- দক্ষিণ ) নির্মাণের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। বিজিএসএল প্রধান নির্বাহী হিসাবে যোগদান করেন আমাদের আরও একজন প্রিয় তিতাস গ্যাস সহকর্মী টি আইএস এন খান লোদী। উনি ধীর স্থির পরিকল্পনা কাজে সুশৃঙ্খল। প্রসাশক হিসাবে মহসিন সাহেবের মতো অনেক চৌকষ ছিলেন না। বিজিএসএলের সূচনা থেকেই একটি মহল অযথা গুজব রটিয়ে কোম্পানির কাজে বিঘ্ন ঘটাতে সচেষ্ট ছিল। আঞ্চলিকতা সৃষ্টির প্রবণতা ছিল। কিন্তু মহসিন সাহেবের প্রখর ব্যাক্তিত্ব এবং সর্বস্তরে যোগাযোগের কারণে এগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। নিকোম্পানি থেকে বিদায় নেয়ার পূর্ব মুহূর্তে তিনি নিজস্ব বিবেচনায় কয়েকজন বিএমবিডিসি থেকে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারকে ব্যাবস্থাপনা পদে পদায়ন করেন। এদের গ্যাস কোম্পানির কারিগরি কাজ বিশেষত চট্টগ্রাম অঞ্চলের মত বিশাল গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক স্থাপনের কারিগরী ঘন কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল না।গ্রহণ করে অধস্তন কিছু চতুর কর্মকর্তা। বিতরণ কাজে এইসব কর্মকর্তা কিছু কর্মচারীকে সঙ্গী করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ এবং বৈধ গ্রাহকদের অবৈধ গ্যাস ব্যবহার সূচনা করে।ম্পানি ব্যাপী একটি অবৈধ সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে।পাশাপাশি কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তার পৃষ্ঠপোষকতায় কুমিল্লা ,চট্টগ্রাম আঞ্চলিকতা প্রসার পেতে থাকে। কোম্পানির প্রকৌশলী কর্মকর্তাদের নিয়োগ কাজে লিখিত পরীক্ষার সময় এমনি একটি দুরভি সন্ধি মূলক কাজের হাতে নাতে প্রমান পেয়ে আমি কোম্পানি ব্যাবস্থাপনার নজরে এনে কয়েকজন সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকরতার বিরাগভাজন হয়।এছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবে দাগনভূঁইয়া ,বসুরহাট ,সেনবাগ, মুরাদনগর , দেবিদ্বার এলাকায় গ্যাস বিতরণ আর্থিক ভাবে লাভজনক না হলেও কোম্পানি কাজগুলো হাতে নিয়ে কোম্পানির আর্থিক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।কোম্পানির সূচনায় অনেক অবদান রাখা জনাব আলাউদ্দিন আহমেদ দুরারোগ্য ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃতুবরণ করেন। সদাহাস্যময় আলাউদ্দিন সাহেব অত্যন্ত দক্ষ ,সৎ এবং নিবেদিত কর্মকর্তা ছিলেন। কোম্পানি একজন অভিভাবক হারায়।
কোম্পানির এইসব ঘটনায় কোম্পানির প্রধান নির্বাহীকে সৎ উপদেশ দেয়ায় অর্থ বিভাগীয় প্রধান চৌধুরী হাফিজুর রহমান অশুভ মহলের রোষানলে পড়েন। কুমিল্লা পুলিশ লাইনে কোম্পানির বার্ষিক স্পোর্টসের সময় চৌধুরী হাফিজুর রহমানকে অপদস্ত করা হয। কোম্পানির ভোরের পাখি হিসাবে কোম্পানির স্বার্থ বিনাশী বিষয় গুলো মেনে নিতে কষ্ট হওয়ায় আমি লিখিত ভাবে বিষয়গুলো মেইল আকারে কোম্পানির উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানাই। কিছু দিন পর দেশের অন্যতম প্রধান সাময়িকীতে বিজিএসএলের বিভিন্ন বিষয়ে প্রমান সহ প্রতিবেদন ছাপা হয়।পেট্রোবাংলা প্রতিবেদনে অভিযোগকৃত বিষয় সমূহ আমলে না নিয়ে আমাকে এবং অলকেশ চৌধুরীকে সিলেটে বদলির আদেশ জারি করে। অবশ্য এই বিষয়ে বিজিএসএল প্রধান নির্বাহীর মতামত না নেয়ায় আমাকে বিজিএসএল রিলিজ না করে কুমিল্লায় বদলি করে সঞ্চালন বিভাগে ক্যাথোডিক প্রটেকশন শাখায়। আমার ছায়া সঙ্গী ছানোয়ারকে আমি সমগ্র বিতরণ ব্যাবস্থার ক্যাথোডিক নিরোধ বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করি। কিছুদিনের মধ্যে আমাদের একটি ১০ সদস্যের কারিগরি দলকে গ্যাস সঞ্চালন বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয় জন্য নেদারল্যান্ড পাঠানো। আমার স্ত্রী তখন অন্তঃসত্ত্বা। ঢাকায় বাসায় তাকে একা রেখে আমাকে তিন মাসের জন্য বিদেশ ট্রেনিংয়ে যেতে হয়েছিল। সেই সময় থেকে বিজিএসএলের পতন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে কেজিডিসিএল এবং বিজিডিসিএল বর্তমান অবস্থায় পৌছাতো না। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বিপুল কালো অর্থ উপার্জন করে কানাডা , অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড প্রবাসী হয়েছে। সুযোগ রেখে গাছে আয়ুব আলী খানদের মতো কর্মকর্তাদের জন্য কালো অর্থদিয়ে কম্পানির তথা গ্যাস সেক্টরের সর্বনাশ করার।
ঢাকায় থাকার সময় আমরা ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার আধুনিক ডেমরা সিটি গেট স্টেশনের কাজ যথাসময়ে সম্পাদন করে বৃহত্তর ঢাকার ক্রমবদ্ধমান গ্যাস চাহিদার একটা অংশ মেটানোয় ভূমিকা রাখি। আমার তিতাস অভিজ্ঞতার কারণে তিতাস গ্যাসের সঙ্গে সমন্বয়ে অসুবিধা হয় নি।এছাড়া আমরা ডেমরার নিচু জলমগ্ন এলাকায় শীতলক্ষা নদী
ড্রেজিং করে ভূমি উন্নয়ন করি। এই সময় ডেমরা সিটি গেট এলাকায় সুন্দর ফুলের বাগান দর্শনীয় ছিল।এরশাদ সরকাকরের সময়ে তখন প্রায় ধর্মঘট হতো।অনেক রাতে আমরা সিটি গেট স্টেশনের কন্ট্রোল রুমে রাত্রিযাপন করে স্টেশন সচল রাখি।
ঢাকা থাকায় ক্রীড়া সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও জড়িয়ে পড়ি. ক্রীড়াজগৎ , বিচিত্রা ,সচিত্র সন্ধানী সহ সাময়িকীতে নিয়মিত প্রতিবেদন লিখি, ইনকিলাব, ডেইলি অবজার্ভার দৈনিক প্ৰতিকা গুলোতেও নিয়মিত রিপোর্ট লিখতাম। ক্রিকেট কিংবদন্তি ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের আমার কোরেশী ক্রিকেট দলের সফরের সময় নিয়মিত লিখেছি। আমার ছেলে শুভ্রকে কোলে নিয়ে ইমরান খান ছবি তুলেছিল। শুভ্রকে আব্দুল কাদের এবং ওয়াসিম আকরাম আদর করেছিল। আমি Daily Observer পত্রিকার জন্য ইমরান এবং ওমর কুরেশির প্রতিদিন ইন্টারভিউ নিয়েছি।
প্রথম সাফ গেম্স্ ঢাকায় অনুষ্ঠানের সময় অফিসিয়াল প্রকাশনী গ্লিমসের মূল প্রতিবেদক ছিলাম। বাংলাদেশের এক প্রজন্মের কাছে আমি প্রিয় ক্রীড়া লেখক ছিলাম।
নেদারল্যান্ডে আমাদের তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে পরের পর্বে লিখবো।