সালেক সুফী।।
টোনাটুনির সংসার বুয়েটের কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ার , তিতাস গ্যাসে কর্মরত, খেলোয়াড় , লেখক, দেখতে মন্দ না স্বভাবতই জীবনসঙ্গী হিসাবে মন্দ ছিলাম না। রোজির সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে আমার ভাই বোনদের রাজি করতে বন্ধু সহকর্মীরা বিরাট ভূমিকা রাখেন। শ্রদ্ধেয় মহসিন ভাই , মাহমুদ রশিদ , এসপি মাহবুব ভাই , ক্রিকেটার অগ্রজ রকিবুল ভাই সমর্থন দেন। পরিবারের সমর্থন না থাকায় আমাকে অতি সাধারণ ভাবে বন্ধুদের সাহায্য নিতে হয়।আমার বিয়ের অঙ্গুরীয় বন্ধু মং দিয়েছিলো। এসপি মাহবুব ভাই বিয়ের সামান্য কিছু শাড়ি ,কাপড় কিনে দিয়েছিলেন। বৌ ভাত অনুষ্ঠান করেছিল তিতাস সহকর্মী এবং মোহামেডান ক্লাবের কিছু খেলোয়াড়। বিয়েতে সাক্ষী ছিল আতাউল হক মল্লিক এবং বড় ভাই মালেক। সালমা আপা ,মরিয়াম , শিরিন ভাবি সহায়তা করে. আমার তিতাস গ্যাস সহকর্মীরা সবাই পাশে ছিলেন। কামরুল ভাই, অলকেশ দাদা , মিন্টু, জামাল , তারেক সবাই সঙ্গী ছিল।বালিকা বধূ ঘরে এসেই আমার সঞ্চয়ে থাকা টি শার্ট , জুতা , অতিরিক্ত বিষয় বিনিময় করে রান্নার সরঞ্জাম ক্রয় করে।শুরু হয় হাটখোলার মোড়ে বন্ধু সাইফুলদের বিক্রমপুর হাউজে টোনাটুনির জীবন। বিন্দু থেকেই শুরু। আমাদের সীমিত আয়ে সুন্দর পরিপাটি সংসারটি গড়ে ওঠে রমণী রোজির গুনে।
তিতাস গ্যাসে পরিসমাপ্তি
বিশ্বাস করুন বা নাই করুন হবিগঞ্জ আশুগঞ্জ পাইপ লাইন নির্মাণ না হতে হতেই সবার প্রিয় মাহমুদ রশিদ ভাইকে বদলি করা হয়। রশিদ ভাই এবং আমাদের ( জাহির , আমি , মিন্টু ,আমাকে ) প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে যোগদানের জন্য বলা হয় নি। আমরা কিন্তু নাছোড় বান্ধা। তিতাস গ্যাসের একটি নিয়ে মিন্টু ,জামাল ,আমি ঠিক পৌঁছে যাই হবিগঞ্জ গ্যাস ক্ষেত্রের সামনে। মন্ত্রী মহোদয় আমাদের পরিচিত। আনুষ্ঠানস্থলে তীব্র প্রতিবাদ জানাই প্রকল্পের আসল মানুষদের বঞ্চিত করে। মন্ত্রী আমাদের সাথে বিশেষ ভাবে কথা বলেন এবং তার ব্যাক্তিগত সোহরকারী সাবিউদ্দিন আহমেদকে উপদেশ দেন আমরা যেন তার দপ্তরে দেখা করি।বলে রাখা দরকার ইতিমধ্যেই আমি ,মিন্টু ,সাইফুল নবগঠিত বিজিএসএলে উচ্চতর পদে চাকুরী পাই. মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করে মাহমুদ রশিদ ভাইকে পিডিডিতে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে উনি জানান উনি তার ঘনিষ্ট ব্যাক্তিগত বন্ধু। উনি বিষয়টি দেখবেন। আমাদের তিতাস গ্যাস রিলিজ না করে ওনার সহায়তায় তিতাস ছেড়ে দেই। এই সময় কুয়েত সালাহউদ্দিন গ্যাস শোধনাগারে মাসিক ১০০০০০ টাকা সমপরিমাণ বেতনে চাকুরী পাই। কিন্তু বাংলাদেশের দেশদ্রোহী সালেক সুফী সেই আকর্ষণ উপেক্ষা করে আরো একটি গ্যাস সেক্টর যুদ্ধ করার জন্য বিজিএসেলে যোগদান করি।
মনে আছে মহসিন ভাই নিজে গাড়ি চালিয়ে আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে কুমিল্লা নিয়ে যান।একসপ্তাহ অতিথি ভবনে থাকার পর সহকর্মী জিন্নাহ তার পুকুর পারে বাসা ভাড়া দেয়। আমাদের আসবাব পত্র বা তৈজষ পত্র ছিল অতি সামান্য। কয়েকদিন পরে এক রাতে আমাদের সামান্য সম্পদ চুরি হয়ে যায়। অবশিষ্ট ছিল আমাদের পরনের কাপড়। অবশ্য জিন্নাহ তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিয়ের শাড়ি ছাড়া অন্য কিছু কাপড় উদ্ধার করে।এভাবেই অতি সাধারণ ভাবে শুরু হয় আমার বিজিএসএল যাত্রা। তিতাস গ্যাস তিন বছর আমার পেশাদারি জীবনের প্রাথমিক শিক্ষালয়। শক্ত ভিতের উপর দাড় করিয়ে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী করেছিল আমায়। তিতাস সহকর্মীদের স্মরণে থাকবে চিরদিন।
চলবে।