সালেক সুফী।।
আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মুষ্টিমেয় যে কয়েকজন বিশ্বাষঘাতক সেক্টর এবং দেশকে বঞ্চিত করেছে নিয়তি তাদের কাউকে ক্ষমা করেনি। তারা কেউ কেউ ফেরারি আসামি ,কেউ দুরারোগ্য রোগে শয্যাশায়ী। অন্যদিকে আল্লাহ আমাকে বেশ কিছু দেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সরকারি ব্যাবস্থাপনায় বীণে খরচে দুনিয়ার অন্যতম সেরা সার্জন হাওয়ার্ড আমার স্ত্রীর ওপেন হার্ট সার্জারি করে দুটি কৃত্তিম ভাল্ভ স্থাপন করেছেন। আমরা দুইজন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সিটিজেন হিসাবে অনেক রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাচ্ছি। দুটি ছেলে এখানে সুপ্রতিষ্ঠিত। দেশে গেলে এখনো সম্মান পাই. মন খুলে কথা বলতে পারি।
তিতাস গ্যাসের রঙিন দিনগুলো
সত্তর দশকে তিতাস গ্যাস ছিল অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান। প্রায় ২০০ জন প্রতিযোগীর মাঝ থেকে আমি ,বন্ধু মং কিউ সিন্ , জামিল খান ,তাওসিফ সাত্তার নির্বাচিত হয়েছিলাম। জামিল এবং সাত্তার উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র চলে যায়।মং এনসিয়ারে যোগদান করে।আমাদের সময়ে তিতাস গ্যাস ছিল গ্যাস সেক্টরের মূল প্রতিষ্ঠান। বেতন কাঠামো অন্নান্ন যে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আকর্ষণীয় ছিল। আমি তিতাসে যোগদানের আগেই পরবর্তীতে আমার চাকুরী জীবনের আদর্শ চৌধুরী মোহাম্মদ মহসিনকে চিনতাম। উনি আমাদের সঙ্গে বুয়েট জিমনেসিয়ামে স্কোয়াশ খেলতেন। উনি মগবাজারে আমার প্রিয় শিক্ষক ডক্টরইকবাল মাহমুদ স্যারের বাসায় ভাড়া থাকতেন। মনে আছে আমাদের খুব প্রাসঙ্গিক লিখিত পরীক্ষা হয়েছিল। একই সময়ে আমি চাকুরীর ইন্টারভিউ দিয়ে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকে চাকুরী পাই।তিতাস গ্যাসে মৌখিক পরীক্ষার দিন আমি ঢাকা স্টেডিয়ামে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ঢাকা ক্রিকেট লীগের ফাইনাল খেলছিলাম। লাঞ্চের সময় কাছেই তিতাস গ্যাসের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মৌলিক ইন্টারভিউতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশ্নের পর আমি ফরিদপুর জেনে প্রশ্ন করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু বিষয়ে। আমি বলেছিলাম মনে আছে বঙ্গবন্ধুর শক্তি ছিল অন্তত দেশ প্রেম আর দুর্বলতা ছিল মানুষকে ভালোবাসার জন্য কঠোর হতে না পারা।
আমার সুযোগ হয়েছিল সর্ব জনাব আনোয়ারুল হক, চোধুরী মোহাম্মদ মহসিন, টিআই এস এন খান লোধি, মাহমুদ রশিদ, ফজলে এলাহী , শামুসদ্দিন আহমেদ ,একেএম শামুসদ্দিনের মত প্রথিতযশা গ্যাস সিস্টেম বিশারদদের সাথে কাজ করার। আমাকে পাইপ লাইন কনস্ট্রাকশন বিভাগে কাজ করতে দেয়া হয়েছিল। সেখানে আমার সহকর্মী ছিলেন দেলোয়ার বখত , মাসুদ চৌধুরী, ইকবাল ভাই, শের খান , নুসূস সাফা , খালিদ ভাই , কাদের ভাই, নিজাম ,নুরু , কাজী আমিন, পিডিডি তখন ছিল পরিবারের মতো।
মনে আছে প্রাথমিক ওরিয়েন্টেশনের পর আমাকে প্রথম দিন কাজী আমিন মোটর সাইকেলে চড়িয়ে পুরানো ঢাকায় গ্যাস বিতরণ লাইন পরিদর্শনে নিয়ে যায়।এই সময় তিতাস গ্যাস থেকে প্রায় ২০ জন প্রকৌশুলি ইরাক এবং লিবিয়া চলে যাওয়ায় বিশাল সৃষ্টি হয়। আমাকে সুযোগ দেয়া হয় টঙ্গী থেকে সাভার পর্যন্ত ১২ ইঞ্চি বাসের ক্রস কান্ট্রি উচ্চচাপ পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকৌশুলি হিসাবে কাজ করার। প্রকল্পটি ঠিকাদারের অসচ্ছলতার কারণে রুগ্ন হয়ে পড়েছিল। এছাড়া টঙ্গী এলাকায় পাইপ লাইনের পথস্বত্ব নিয়ে অনেক সংকট ছিল। টঙ্গীর চেরাগী মার্কেট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত রুগ্ন প্রকল্পটি আমার পাইপ লাইন নির্মাণ ক্যারিয়ার গড়ে দিয়েছিলো। অনেক কিছুই শিখেছিলাম একজন জ্যৈষ্ঠ কর্মচারী শফি আহমেদের কাছ থেকে। .নিজাম , নুরু ওদের কাছ থেকেও শিখেছিলাম। খালিদ ভাই অনেক সহায়তা করেছিলেন। যাহোক অনেক দুরূহ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আমার নিজের প্রতি অনেক আস্থা বেড়ে গিয়েছিলো। এখনো যখন বাংলাদেশ সফরে টঙ্গী বা সাভার যাওয়া হয় সত্তর দশকের সেই কঠিন দিন গুলোর কথা মনে পড়ে। শুধু টঙ্গী আশুলিয়া পাইপ লাইন অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি পুরো পর্ব লেখা যেতে পারে। কিন্তু আমাকে স্বল্প সময়ে ২৮ বছরের কর্ম জীবনের বিবরণ লিখতে হবে।
চলবে।