সালেক সুফী।।
ক্রীড়াঙ্গনের দিনগুলো
বাংলাদেশের গ্যাস সেক্টরে কাজ করার পাশাপাশি ক্রীড়াবিষয়ক লেখালিখিতে নিবিড় ভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্দালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলাম। নিজে ফুটবল ,ক্রিকেট খেলতাম একটা পর্যায় পর্যন্ত। কিন্তু সকল খেলাধুলা নিয়ে শীর্ষস্থানীয় দৈনিক কাগজ, বিচিত্রা , রোববার ,সচিত্র সন্ধানী সহ সাময়িকীতে নিয়মিত লিখতাম। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো সরকারি উদ্যোগে প্রকাশিত ক্রীড়া মাসিক পত্রিকায় ছিলাম অন্যতম ভোরের পাখি। একটা পর্যায়ে ক্রীড়াজগৎ/ স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড নামের দ্বিভাষিক পত্রিকার ইংরেজি অংশটার প্রধান প্রতিবেদক ছিলাম। দৈনিক বাংলা প্রকাশনীর মহাব্যবস্থাপক প্রখ্যাত ভাষ্যকার শ্রদ্ধেয় তাওফিক আজিজ খান ছিলেন এবং আমার বাংলাদেশ ক্রীড়া সাংবাদিকতার প্রবাদ পুরুষ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ছিলেন খেলাধুলো নিয়ে আমার গুরু। প্রয়াত সব্যসাচী ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ আতাউল হক মল্লিকের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক ছিল. শ্রদ্ধেয় আব্দুল হামিদ ভাই , মনজুর হাসান মিন্টু আমাকে অনেক স্নেহ করতেন।
১৯৮০ -১৯৮১ বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ১৯৭৩ সালে যখন বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি নতুন ভাবে গঠিত হয় তখন আমি ,আজিমপুরের বন্ধু ,সহপাঠী ইকরামুজ্জামান ছিলাম নবীন সদস্য। ক্রীড়া জগতের সালমা আপার সঙ্গে ভাই বোনের সম্পর্ক ছিল।সুলতানা আপা , নাজমা আপা , বকুল আপা , সুফিয়া ,মিমু , অনু , দলীয় ত্রুজ ডানা ,মরিয়ম ,লিনু ,রুমানাদের নিয়ে অনেক লিখেছি।
ক্রীড়াজগতে আমার লেখাগুলোর মধ্যে কিংবদন্তি ক্রীড়া ব্যাক্তিত্ব বক্সার মোহাম্মদ আলীর সাক্ষাৎকার , চট্টগ্রামে সফরকারী পাকিস্তান দলের সঙ্গে ম্যাচের লঙ্কা কান্ড নিয়ে ” ক্রসবিদ্ধ ক্রিকেট” , স্বাধীনবাংলা ফুটবল দল নিয়ে লিখিত ” মুক্তিযুদ্ধের ফুটবল ফ্রন্ট” , প্রবীণ ক্রীড়াবিদদের নিয়ে ধারাবাহিক ” কেউ ভোলে না কেউ ভোলে ” অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। বাংলাদেশে মহিলাদের ফুটবল , ক্রিকেট , হকি , ভলিবলের প্রথম উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। নাজমা আপা ,আলেয়া আপাদের কথা মনে আছে. একসময় হামিদ ভাই ,তৌফিক ভাইদের সঙ্গে খেলার রেডিও টেলিভশন ধারাভাষ্য শুরু করেছিলাম। আমি, মং , জামিল , বদরুল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্দালয়ের হয়ে প্রথম টেলিভিশন ধাধা প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্দালয় দলকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। বন্ধু মং , খালিদ হাসান , শাকিল কাসেম অনেক উঁচু মানের ক্রীড়া লেখক ছিল।
ক্রীড়ালেখক সমিতির সদস্য হয়ে অনেক ক্রিকেট ফুটবল খেলা খেলেছি। মনে আছে বাংলাদেশে সম্ভবত প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লেভার নিয়ে ক্রিকেট ফুটবল ম্যাচ ১৯৭৩ ক্রীড়া লেখক সমিতি খেলেছিল। ফুটবল খেলাটি ছিল ঢাকা স্টেডিয়ামে ক্রীড়া লেখক সমিতি বনাম ঢাকার বিদেশী দূতাবাস গুলোর সম্মিলিত দল। খেলার প্রথমার্ধে আব্দুল হামিদ ভাই আহত হলে আমি শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে গোল রক্ষকের দায়িত্ব নেই. প্রতিপক্ষ দলে জার্মানি ,যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়ার কয়েকজন খেলোয়াড় ছিল।আমাদের দল কামরুজ্জামান ভাই, আতাউল হক মল্লিক, রকিবুল হাসান খেলেছিলেন। আমরা ২-১ গোলে পরাজিত হই। ঢাকা বিশ্ববিদ্দালয় খেলার মাঠে এবং মহাখালী বাংলাদেশ টোবাকো কোম্পানির মাঠে আমরা কমনওয়েলথ দূতাবাস সমূহের দলের বিরুদ্ধে দুটি ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিলাম। মনে আছে সাংবাদিক সমিতির নেতা পরবর্তীতে মন্ত্রী এনায়েত উল্লা খান এবং তাওফিক আজিজ খান আমাদের দলে ছিলেন। আমরা নিয়মিত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্দালয় শিক্ষক সমিতির সাথে খেলতাম। এছাড়া ঢাকা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রায় সকালে ওই সময়ে সদ্য অবসর নেয়া প্রতাপ ,টিপু, মেজর হাফিজ, পিন্টু, উনাদের দিয়ে দল গড়ে বিভিন্ন সৌখিন দলের সঙ্গে ফুটবল খেলতাম।তিতাস গ্যাসে চাকুরীরত থাকা অবস্থায়ও এই ধারা অব্যাহত ছিল। ক্রীড়াঙ্গন ছিল আমার অবাধ বিচরণ ভূমি। সেই সময় প্রথম যুগের অধিকাংশ শীর্ষ স্থানীয় খেলোয়াড় এবং ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে ছিল আত্মার বন্ধন। ১৯৮০ দশকে জীবিকার তাগিদে ঢাকার বাইরে গ্যাস সেক্টরের কাজে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে পড়ায় ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে নিত্যদিনের সম্পর্কে ছেদ পরে। বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের আঁতুড়ঘরের অনেক অজানা কাহিনী আমার জানা আছে।
এখনো বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে ধারাবাহিকভাবে বাংলা ,ইংরেজি দুই ভাষাতেই অনলাইন পত্রিকা গুলোতে নিয়মিত লিখি। অস্ট্রেলিয়া ,ভারত ,বাংলাদেশে সুযোগ পেলেই খেলার মাঠে ছুটে যাই. ব্যাক্তিগত ভাবে বিশ্ববিদ্দালয় পর্যায় পর্যন্ত ফুটবল ,ক্রিকেট খেলেছি। ১৯৭৮-৮১ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান ক্রিকেট দলের সদস্য ছিলাম। ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গেও জড়িত ছিলাম। বন্ধু নিজামকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলাম মোহামেডান সমর্থক গোষ্ঠী। বাংলাদেশের অনেক মানুষ এখনো ক্রীড়াঙ্গনের সালেক সুফিকে স্মরণে রেখেছে।
বিজিএসএল অভিজ্ঞতার ধারাবাহিক প্রতিবেদন।
পূর্বের পর্বের ধারাবাহিকতায়
সীতাকুণ্ডের শীতলপুর থেকে ফেনী যদি পর্যন্ত ২-৩ মাস সময় লাগলো ফ্রন্ট এন্ড পৌঁছাতে। মনে আছে গুলজার ভাই প্রতিটি ওয়েল্ডিংয়ের রেডিওগ্রাফি রিপোর্ট টয়লেট পেপারের মতো করে রোল করে সংরক্ষণ করেন। ওয়েল্ডিংয়ের খুঁটিনাটি ওনার নখ দর্পনে থাকতো। বাখরাবাদ -চট্টগ্রাম পাইপ লাইন প্রকল্পে কয়েকজন বিশ্বমানের ইতালিয়ান এবং আইরিশ ওয়েল্ডার , কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় ওয়েল্ডিং ইন্সপেক্টর থেকে ওয়েল্ডিং বিষয়ে অনেক কিছু শিখেছি। আমার পরিদর্শক দলকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে শীতলপুর থেকে ফেনী পর্যন্ত অন্তত ছোট বড়ো ২০ টি পাহাড়ি ক্রিক , তিনটি মেইন লাইন ভালভ স্টেশন ,দুটি স্থানে ঢাকা -চট্টগ্রাম রেল সড়ক ,একটি রেল লাইন অতিক্রম কাজ সহ, অনেক টাই ইন কাজ দেখতে হয়। প্রতিদিন পাইপলাইন এগিয়ে যাওয়ায় নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ছিল। আমার অংশে ড্যানি মারফি নাম একজন কৌতুক প্রিয় স্কটিশ ফোরম্যান ছিল. অনেক আন্দদঘন দিনের কথা মনে আছে।একদিন পাইপ লাইন সংলগ্ন এলাকায় জোরারগঞ্জ বাটিলিয়ন পুলিশ সদরদপ্তের এক মুরগির খামারি এসে জানায় পাইপ লাইনে ভারী যন্ত্রপাতির আওয়াজে নাকি তার ফার্মের মুরগিগুলো মোর যাচ্ছে। ক্ষতিপূরণের দাবি পূরণ না করা হলে সে কিছুতেই কাজ করতে দিবে না।ড্যানি মারফি বসে আছে। ওই দিন থেকে আবেদিনের টিমের অধীনে স্বয়ংক্রিয় মেশিন দিয়ে পাইপ লাইন ট্রেনচিং করার কথা।আমি মুরগির খামারের মালিক এবং স্থানীয় গন্যমান্য মানুষদের সাথে বসলাম, কয়েকজন পুলিশ সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিল। তড়িৎ উপস্থিত বুদ্ধি এলো।আমি ঠিকাদার প্রতিনিধিকে জানালাম খামার পরিদর্শন করে প্রতিটি মৃত মুরগির ক্ষতি পূরণ দিতে। বলাবাহুল্য কোন মুরগি মারা যায় নি। তবুও আমরা মালিককে কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলাম।
আরো একটি ঘটনার কথা স্মরণে আছে। যেখানে বাড়বকুন্ড টাউন বর্ডার স্টেশন সেখানে রাইট ওয়ে প্রস্তুতের সময় ত্রু একটি বুজুর্গের কবরের যেকোনস ভেঙে ফেলেছিলো। এটি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে অনেক বিতর্ক হল্যে ব্যাক এন্ডে আমার টিমের কাজে বিঘ্ন ঘটে। এই অঞ্চলে আবেদিনের তদারকিতে থাকা পাইপ লেয়িং ত্রু কাজ করার সময় পাইপার উপর সেট অন ওয়েট পরে ডেন্ট হয়ে যায়।মহসিন ভাই আবার মাজার ভক্ত মানুষ। একদিন উনি সালমান রহমান সহ এসে ক্ষতিগ্রস্ত কবর নতুন করে বাঁধাই , সংলগ্ন মসজিদ উন্নতকরণ এবং পুকুর পান খনন করে দিতে থীদেরকে নির্দেশ দেন। আমাকে বিষয়টি তদারক করা এবং ওই স্থানে বারাবকুন্ড টিবিএস স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
পাইপলাইন গুলো চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামিয়ে পাশে টিএসপি সার কারখানায় খালি জায়গায় প্রথম রাখা হয়েছিল। সালফার ডাই অক্সাইড ফিউম কিছু লাইন পাইপের বাহ্যিক করেছিল করেছিল। মিরেরসরাই অঞ্চলে এই ধরণের কিছু পাইপ আশায় আমি এবং আবেদীন মাইল ডেপ্থ গেজ দিয়ে মেপে দুটি পাইপ শুধু বাদ দিয়েছিলাম।
এছাড়া পাইপ লাইন কাজের শুরুর দিকে শীতলপুরে কিছু অংশের পাইপ রাপিং ওভারল্যাপ নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল পরবর্তী সময়ে পাইপ লাইনের ২ কিলোমিটার অংশ আমার তত্ত্বাবধানে পুনরায় ভূগর্বে শায়িত করা হবে। সীতাকুন্ড পর্ব শেষে আমাদের ক্যাম্প ফেনীতে ডাক্তার পাড়ায় স্থানান্তরিত হয়। ফেনীতে ফেনী , মুহুরী , ডাকাতিয়া নদী অতিক্রম সহ ফেনী আইসিএস কাজ অনেক জটিল এবং কষ্ট সাদ্ধ ছিল। ফেনীতে তখন জয়নাল হাজারীর দাপট। আমাদের ঠিকাদারের স্থানীয় কোম্পানি বেক্সিমকোতে তখন মেজর এহ্সানুল্লাহ , মেজর দোস্ত মোহাম্মদ সিকদার দুইজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু যোগদান করে। নোয়াখালীর কর্নেল এনাম সাহেবকে স্থানীয় কাজ সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। আমার সাথে এই সময় সানোয়ার চৌধুরী ,এনামুল করিম যোগদান করে. মুস্তাফিজ এসে আমাদের সার্বক্ষণিক সহায়তা করে। আমাদের দলটি অনেক চৌকষ ছিল. ফেনী অঞ্চলের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলাদা পর্বে বিস্তারিত লিখবো। ফেনী অঞ্চল ফেনী নদীর পচিম পাড় থেকে গুণবতী নিচু এলাকা ছিল পাইপ লাইনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এলাকা।
চলবে।