সালেক সুফী।।
শুরুতেই বলেছি ২৫ আগস্ট ২০০৫ যখন আমাকে কোনো কারণ না দর্শিয়ে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয় তখন আমি অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়ি। আমি তখন জিটিসিএলের পরিচালক ( অপারেশন ) হিসাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলাম। বাংলাদেশের সব উচ্চ চাপ গ্যাস স্থাপনা গুলো অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পরিচালনা করতাম চাহিদা মোতাবেক গ্যাস নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য। সেই সময় ৯০% বিদ্যুৎ উৎপাদন। ১০০% সার উৎপাদন, শিল্প ,বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করায় অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল।আমি একটি আধুনিক গ্যাস সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সার্বক্ষণিক সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতাম। চাকুরী জীবনে আমি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত ছিলাম। আমাকে বহু পরিশ্রম করে বিয়ানীবাজার থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত গ্যাস কনডেনসেট পাইপ লাইনের চুরি বন্ধ করতে হয়েছিল।
পেট্রোবাংলার নির্দেশে আমি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্যাস সেক্টরকে প্রতিনিধিত্ব করেছি। কেউ বলতে পারবে না আমার দ্বারা কারো ক্ষতি হয়েছে বা দুর্নীতি করেছি। পেট্রোবাংলার নির্দেশে বেশ কিছু বড় ধরণের কাজ যেমন মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারত পর্যন্ত গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে নেগোশিয়েশন , ইউএসএইড আমন্ত্রণে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন সফরে যুক্তরাষ্ট্র ,কানাডা সফর , মালয়েশিয়ায় পেট্রোনাস সফর করেছিলাম। তিতাস গ্যাসের একটি দুর্নীতি দূষিত প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সেতু গ্যাস সংযোগ প্রকল্পের ইনকোয়ারি কমিটিতে কাজ করার ফলে তৎকালীন জ্বালানি সচিব খন্দকার শহিদুল আলমের রোষানলে পরি। জানিনা সেই কারণে কিনা অথবা বিএনপি -জামাত সরকারের সময়ে হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্ট কিছু মহলের অসঙ্গত বিষয়ের বিরুদ্ধে আপোষহীনতার কারণে কিনা আমাকে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে চাকুরিচ্যুত করা হয়।আমি জানি আমার ৯৯% সহকর্মী বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় আর হতাশা পোষণ করেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে বিস্তারিত লিখবো।
বিশ্ববিদ্দালয় জীবন।
সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশে বুয়েটের মতো স্বানামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ ছিল বিশাল অর্জন। যদিও আমি বুয়েট জীবনে খুব একটা মনোযোগী ছাত্র ছিলাম না। কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো জটিল পাঠের পাশাপাশি ক্রিকেট ,ফুটবল সব খেলায় আকর্ষণ ছিল, নাটক ,সিনেমা , বিতর্ক ইত্যাদি এবং লেখালিখিতে সমান আগ্রহ ছিল।যাহোক চার বছরের অনেক স্মৃতিময় অভিজ্ঞতা শেষে ১৯৭৭ স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে কিছুদিন আমার বড় বোনের মহিলা কলেজে প্রভাষক হিসাবে খণ্ডকালীন কাজ করি।এর পর শিল্প ব্যাংকে ৬ কাজ করার পর তিতাস গ্যাসে ১৯৭৮ জুলাই থেকে জ্বালানি সেক্টরে কর্ম জীবন শুরু হয়। তিতাস গ্যাসের অফিস তখন মতিঝিল পাড়ায় ছিল।স্টেডিয়াম সংলগ্ন থাকায অফিস সময় শেষে ঢাকা স্টেডিয়াম , ইসলামিয়া রেস্টুরেন্ট, ক্লাব পাড়া ,পত্রিকা অফিস সময় কেটেছে। নিজে ফুটবল ,ক্রিকেটের পাশাপাশি খেলা নিয়ে ইংরেজি বাংলায় প্রচুর লিখেছি। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের আঁতুড়ঘরের সঙ্গী ছিলাম। ছিলাম ক্রীড়ালেখক সমিতির কনিষ্টতম সদস্য এবং এক সময় সাধারণ সম্পাদক। বেতার টেলিভিশনে ধারাভাষ্যেও হাতেখড়ি হয়েছিল। প্রথম প্রজন্মের নাটক দলের মঞ্চ নাটক নিয়মিত দেখতাম। চলচ্চিত্রাঙ্গন নামের ফিল্ম সোসাইটির সদস্য ছিলাম। চোখে রঙিন চশমা নিয়ে পৃথিবী দেখতাম। বাংলাদেশের প্রথম যুগের ক্রীড়া পরিবারের সদস্য ছিলাম।
পরবর্তী পর্বে গ্যাস সেক্টরের অভিজ্ঞতা বিস্তারিত লিখবো।