সালেক সুফী।।
রাখালের বাঘ উপর্যুপুরি আসলো আসলো আগাম বার্তার মতো ভিন্ন মোড়কে নিষেধাজ্ঞা এসেই গেলো। বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সম্ভাব্য কারচুপির আশংখায় সেদেশে গমনপ্রত্যাসুদের জন্য একধরণের আগাম সতর্করতামূলক বার্তা দিলো মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তর। যুদ্ধজয়ী একটি সংগ্রামী জাতির জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি কলঙ্ক তিলক। বলা হয়েছে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ,নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক ভাবে গ্রহণযোগ্য হবার পথে যারা যেভাবেই বাধার সৃষ্টি করবে তাদের এবং তাদের নিকট আত্মীয়দের যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা প্রদানের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম তাদের সবার কাছে এই ঘোষণা নিদারুন লজ্জা ,ক্ষোভ আর হতাশার। আর এর জন্য প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলো আর তাদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠাগুলো এবং সুবিধাভোগী মহল দায়ী। এর মাদ্ধমে প্রমান হলো নির্বাচন নিয়ে সরকার , সরকারি দল , বিরোধী দল এবং উভয় পক্ষের প্রবাসে ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর আত্মঘাতী কর্মকান্ড মূলত দায়ী। বিশেষ করে বাংলাদেশের কূটনীতি এবং সরকারের মন্ত্রীদের দূতিয়ালি সম্পূর্ণভাবে বার্থ। শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সরকার এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে অবাধ ,নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে তাদের আন্তরিকতা বিষয়ে আস্থা প্রদান করতে পারে নি।হতে পারে একই ধরণের ঘোষণা পশ্চিমা গোষ্ঠী থেকে আরো আসতে পারে। বিষয়টি গোটা জাতির জন্য কলঙ্ক জনক. সরকার বা বিরোধী দল কারো জন্যই শুভকর নয়।
সব সময় সব দেশের রাজনীতি সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কারণেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। বিরোধী দলগুলো যেমন কথায় কথায় ছুটে যায় বিদেশী মিশনগুলোর কাছে নালিশ করতে ,একই ভাবে সরকারি দলগুলো অনেকটা জবাবদিহি করে বিদেশী দূতাবাসে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বিএনপিকে দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং পশ্চিমা দেশের দূতাবাসে ধর্ণা দিতে। একই ভাবে সরকারি দল , প্রধানমন্ত্রী , মন্ত্রীবর্গ যুক্তরাষ্ট্র সহ নানা দেশের বিশেষত প্রতিবেশী দেশের সহায়তাকে নিজেদের ক্ষমতায় টিকে থাকার অবলম্বন হিসেবে মনে করে।
বিরোধী দল নিজেদের অবস্থান না জেনেই ক্ষনে ক্ষনে সরকার উৎখাতের হুমকি দেয় আর সরকারি দল তাদের প্রতিহত করার জন্য পেশিশক্তি প্রদর্শন করে। গনত্রন্তের প্রতি কোনো দলের কোনো নিবেদন বা সম্মান বোধ নেই ,জনগণের প্রতি আস্থা নাই।এমতাবস্থায় রাজপথে সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে ,জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার আশংখা দেখা দিয়েছে। দুনিয়ার কোনো দেশের সরকার প্রধান দেশের বাইরে গেলে পক্ষে বিপক্ষে মিটিং মিছিল না হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যে দেশের সরকারি দল এবং বিরোধী দলের রাজনীতি প্রবাসে বিস্তৃত। কোনোকোনো ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব সংঘাতের কথা শোনা যায়।সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী জাপান , যুক্তরাষ্ট্র ,যুক্তরাজ্য সফর করে দেশে ফেরার সাংবাদিক সম্মেলনে কিছু কথা বলেছেন , লন্ডনে বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কিছু কথা বলেছে সেগুলো হয়তো কৌশলগত ভাবে এড়িয়ে গেলেই ভালো হতো। নির্বাচন নিয়ে যখন রাজপথ উষ্ণ হচ্ছে ঠিক তখনি কয়েকটি রাষ্ট্রদূতের বিশেষ নিরাপত্তা প্রটোকল উঠিয়ে নেয়াও সময়ানুগ হয় নি।
যাহোক কোনো দেশ যদি যুক্তিসঙ্গত কারণে কোনো দেশের কিছু নাগরিকদের সেই দেশে ভিসা প্রদান নিয়ন্ত্রণ করে কিছু বলার থাকে না। তবে নির্বাচন বিষয় সুস্পষ্ট করে এই ধরণের আগাম ঘোষণায় কারো পুলকিত হবার কারণ নেই ।দেখা যাক কিভাবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা প্রমান করে। কতটা সফল হয় সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে? যাই হক সরকারি দল বা বিরোধী দল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষণা বিষয়ে চট জলদি প্রতিক্রিয়া না দিয়ে নিজেদের সংযত করলে ভালো হবে।