সালেক সুফী।।
বৈশিক কারণে এবং আমলা নির্ভর কিছুটা ভ্রান্ত নীতির কারণে বাংলাদেশ এখন ক্রান্তিলগ্নে। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অগ্নিমূল্য। ডলার সংকটে প্রাথমিক জ্বালানি আমদানিতে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হয়ে রপ্তানি আয় কমে যাচ্ছে। এরই মাঝে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারি এবং বিরোধী দল রাজপথে মুখোমুখি। উভয় দল নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। দুই পক্ষ অবস্থান বজায় রাখলে সংঘাত অনিবার্য। অথচ ২০২৬ বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হওয়ার কথা। ২০৩০ উচ্চ মদ্ধ আয়ের দেশ এবং ২০৪১ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পরিকল্পনা আছে। অথর্নীতি শক্ত ভিতের উপর আছে বলা যাবে না। বিশাল বৈদেশিক ঋণের বোঝা সিন্দাবাদের বুড়োর মতো ঘাড়ে চেপে আছে।দ্রুত কমছে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়। এই মুহূর্তে রাজনৈতিক সংকটে অরাজকতা সৃষ্টি হলে ২০২৪ থেকে মহাসংকট অনিবার্য। পেশাদার বিশেষজ্ঞরা , অর্থনীতিবিদরা বেশ কিছু দিন থেকেই সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু কেউ শুনছে না কারো কথ। দেশের সংকট বিদেশী কোনো দেশ বা শক্তি সমাধান করে দিবে না।নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।এই মুহূর্তে সরকার এবং বিরোধী দল গো ধরে থাকলে কারো মঙ্গোল হবে না।
বিশ্ব এখন দুই বা ততোধিক শক্তি বলয়ে দ্বিধা বা ত্রিধা বিভক্ত। বাংলাদেশে কিন্তু চীন ,ভারত ,জাপান কোরিয়া ,রাশিয়া ,যুক্তরাষ্ট্র ,মদ্ধপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ সবার উপস্থিতি আছে. সবাইকেই কূটনৈতিক কৌশলে ভারসাম্য স্থাপন করে চলতে হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সবচেয়ে লাভবান হচ্ছে বিশাল প্রতিবেশী ভারত। বাংলাদেশের অধিকাংশ সমস্যার সমাধান না হলেও ভারত কিন্তু বাংলাদেশ থেকে অনেক স্বার্থ উদ্ধার করে নিয়েছে। অনুমেয় বিশাল প্রতিবেশীর সঙ্গে বৈরী অবস্থান কাম্য নয়। তাই বলে দুই স্বাধীন দেশের সম্পর্ক একপক্ষীয় হয় উচিত না।
আসুন ফিরে নির্বাচন নিয়ে সংকট বিষয়ে আলোচনা করি. মানলাম কনস্টিটিউশন পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিধান বিলুপ্ত করেছে সরকারি দল। কিন্তু সেটিই যদি সমাধান হয়ে থাকে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে আবারো কনস্টিটিউশনে সেই বিধান সংযুক্ত করে অন্তত দুইটি নির্বাচন করে বাধা কোথায়? সরকারি দল যে কোনো ভাবেই ২০১৪ বা ২০১৮র মতো নির্বাচন করে পার পাবে না এটি দিনের মতোই পরিষ্কার। আর যেহেতু অনেক সমস্যা এবং ব্যার্থতার পরেও যেহেতু অর্থনীতি এগিয়ে গাছে তাই অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই বিরোধী দল একক বা সম্মিলিত ভাবে জয়লাভ করবে তার নিশ্চয়তা কি? আসল কথা বিশ্ব দেখতে যাচ্ছে সব দলের অংশগ্রহণে বিশ্বাষযোগ্য নির্বাচন। জনগণ সরকারি দল এবং প্রধান বিরোধী দলের মুখপাত্রদের প্রতিদিনের বাহাস শুনে হতাশ। প্রযুক্তির বিশ্বায়নের যুগে এগুলো বিশ্ব সমাজে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুন ভাবে ক্ষুন্ন করছে।
বিরোধী দল বা ফ্রন্টের রাজপথে আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানোর শক্তি নেই।ওদের একটা বিষয়েও প্রশ্ন আছে। বিদেশী কোনো শক্তি এসেও রাতারাতি ওদের ক্ষমতায় বসাবে না।যা হবে রাজপথে সংঘাত, সংঘর্ষ , সম্পদহানি। দেশের সংকট সমূহ মোকাবেলায় বিরোধী দলের কোনো নীতি কৌশল কি জনতার সামনে দেয়া হয়েছে ? কেন জনতা ওদের বেঁচে নেবে ?
সরকার প্রধান নিজে বিবিসির সাক্ষাৎকারে বলেছেন কোনো একটি বিশেষ দেশ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাচ্ছে। এর আগে তিনি জাতীয় সংসদে বলেছেন একটি দেশ চাইলেই কোনো দেশের সরকার পরিবর্তন করতে পারে। তাই যদি হয় তাহলে সেই দেশের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক করে দেশবাসীকে বিপদে ফেলা শুভ নয়। বরং দেশশাসকদের নির্বাচনের দায়িত্ব স্বচ্ছ নির্বাচনের মাদ্ধমে দেশবাসীর উপর অর্পণ করে শ্রেয়। বাংলাদেশের জনগণ কিন্তু নানা সমস্যা সংকটে পোড় খাওয়া সংগ্রামী মানুষ। বিএনপি , জাতীয় পার্টি সবার শাসন দেখেছে। ১৫ বছর বর্তমান শাসক দলকে দেখছে। সুযোগ পেলে দেশবাসী সঠিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিবে। যদি জনতার শক্তিতে বিশ্বাস থাকে তাহলে দেয়ালের লিখন পরে সরকার প্রধান সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন আশা করি। ২০২৪-২০৩০ বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে স্থিরতা থাকলে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ হবার সুযোগ রয়েছে যদি দেশ প্রেমিক শক্তি দেশ শাসনে থাকে।