সালেক সুফী।।
বাংলাদেশের ইতিহাস বলে শাসক দলের অধীনে কোনো জাতীয় নির্বাচন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ,অবাধ হয় নি। প্রতিটি নির্বাচন শাসক দল কোনো না কোনো ভাবে প্রভাবিত করেছে। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন গুলোতেও বিজিত দোল সুক্ষ কারচুপির অভিযোগ তুলেছে। বর্তমান শাসক দল কনস্টিটিউশন পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক দলের সংস্থান বাতিল করেছে।বর্তমান বাস্তবতা হলো ২০২৩ শেষ বা ২০২৪ শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচিত হবে।আর সেই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণ মূলক এবং অবাধ ,নিরপেক্ষ হয় সেটি এখন দেখার বিষয়। বিরোধী দল ,গোষ্ঠী মাঠের আন্দোলনে সরকারকে পদত্যাগ করে অন্তর্বর্তীকালীন কালীন কোনো অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন করানোর মতো অবস্থায় নেই। আন্তর্জাতিক মহল এবং সংস্থাগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যতই সোচ্চার থাকুক অন্তত আগামী নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেটি নিশ্চিত। আর সেই নির্বাচনে মূল ধারার অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করলে সেটি সংশ্লিষ্ট দলগুলোর জন্য হবে রাজনৈতিক পরাজয়। সুষ্ঠু আর অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেই সরকার পরিবর্তন হবে এটি ভেবে নেয়ার কোনো কারণ নেই. বিপুল উন্নয়নমূলক কাজের বিপরীতে দুর্নীতি ,মুদ্রা পাচার ইত্যাদি অভিযোগ থাকলেও দেশে এখনো তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে সুসংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি। সরকার প্রধান নির্বাচনে অপেক্ষাকৃত সৎ , জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দিলে বিরোধী শক্তি সম্মিলিত ভাবে সরকারি দলকে পরাজিত করতে সক্ষম হবে না।আর বিএনপি বলুন ,জাতীয় পার্টি বলুন দেশ পরিচালনায় বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে তাদের নেতা নেত্রীদের বিষয়ে জনগণের অতীত অভিজ্ঞতা খুব মধুর নয়। বিরোধী দলগুলো এযাবৎ দেশ পরিচালনায় তাদের বিকল্প পরিকল্পনা জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারে নাই।
সবাই জানে ২০১৪ নির্বাচন অংশগ্রহণ মূলক হয় নি। ২০১৮ নির্বাচন নিয়েও নানা অভিযোগ আছে।কিন্তু এই সঙ্গে এটিও স্বীকার করতে হবে ২০০৯- ২০২৩ পর্যন্ত সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় অর্থনীতির আকার বিশাল হয়েছে। খাদ্যে দেশ মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গাছে , টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া গ্রামগুলোতে উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। মেগা প্রকল্পগুলোর সুবিধা পেতে শুরু করেছে দেশ জনগণ। বিকাশমান অর্থনীতির দেশে নানা সমস্যা ,সংকট থাকে। সরকার পরিচালনায় দুর্বলতা আছে। দুর্বলতা গুলোর ফাক ফোকর দিয়ে সুবিধাবাদী গোষ্ঠী দুর্নীতি ,অর্থপাচার করেছে। বলছি না সরকার সবক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ বা সৎ উপদেশ নিয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে বিরোধী দল বা গোষ্ঠীর অতীত রেকর্ডস সমূহ জনগণ ভুলে যায় নি। এই যে দেশ জুড়ে বিপুল উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড চলছে এগুলো সঠিক পথে পরিচালনায় বিরোধী দল কি কোনো পরিকল্পনা জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছে?
বর্তমান সরকারের নেতৃত্বেই দেশ কিন্তু অপেক্ষাকৃত ভালো ভাবে করোনা অতি মারী সামাল দিয়েছে। বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়ন হাব সৃষ্টির পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। যত দিন যাচ্ছে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হচ্ছে। দেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল হয়েছে , আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে।সরকার প্রধান বা শাসক দল বিষয়ে দেশে বিদেশে যে মহল সোচ্চার তাদের বিষয়েও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মনোভাব নেতিবাচক।
তবে স্বীকার করতে হবে শিক্ষা ,স্বাস্থ , জ্বালানি বিদ্যুৎ ,কৃষি , জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্নীতি দমন প্রতিটি ক্ষেত্রে অনেক কিছুই করার আছে আর সেটি বিদ্যমান অবস্থায় বর্তমান সরকার ছাড়া অন্য কোনো দলের পক্ষে করা অনেক দুরূহ। আমি মনে করি না আগামী নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীন ছাড়া অন্য কোনো ভাবে হবে।তবে সেই নির্বাচন কিভাবে আরো অর্থবহ করা যায় ,কিভাবে জনগণের মধ্যেভোটে অংশগ্রহণ আগ্রহ সৃষ্টি করা যায় সেটি নিয়ে যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ পরিচালনায় প্রভাবশালী প্রতিবেশী এবং বিদেশী গোষ্ঠী খবরদারি করবেই। কিন্তু বর্তমান সরকার পেরেছে ভারত ,চীন ,জাপান ,রাশিয়া ,কোরিয়া , যুক্তরাষ্ট্র এবং পচ্ছিমা শক্তিগুলোর পাশাপাশি মদ্ধ প্রাচ্যের দেশগুলোকে বাংলাদেশের উন্নয়ন মহাযজ্ঞে শামিল করতে। আর তাই বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
সরকারী দল যদি নিজেদের ভুলত্রুটি অকপটে স্বীকার করে সেগুলো শুধরে নেয়ার সুস্পষ্ট কর্ম পরিকল্পনা জনগণের সামনে তুলে ধরে এবং প্রার্থী নির্বাচনে ভুল না করে তাহলে কোনো নির্বাচনে ওদের শংকা থাকার কথা নয়। অপরদিকে বিরোধী দলগুলোকেও একক বা সম্মিলিত ভাবে দেশ পরিচালনায় বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে জনগণের শাম্মি যেতে হবে। নির্বাচনে না আসলে বিরোধী দলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। আমরা চাই অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন এবং জনগণের ভোট প্রদানের নিশ্চয়তা।