সালেক সুফী।।
অসময়ে আপন নীড়ে ফিরলেন আরো একজন গানের পাখি। একাত্তরের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা , সাধারণ মানুষের সুলভ চিকিৎসার জন্য সৃষ্ট গণস্বাস্থকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাকারী জাফরুল্লা চৌধুরী কাল রাতে ঢাকায় নিজের হাতে গোড়া হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওইন্না লিল্লাহি রাজেউন। বাংলাদেশে মুষ্টিমেয় যে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ৫২ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ চেতনা লালন করেছেন কথায় ও কাজে তাদের পুরোধা ছিলেন জাফর ভাই। আমি তার সাথে বহুবার দেখা করেছি , কথা বলেছি ,উপদেশ নিয়েছি। আমি তাঁর মাঝে সত্যিকারের দেশ প্রেমিকের ভালোবাসার প্রতিবিম্ব দেখেছি। জাতির সংকট মুহূর্তে ,দুর্যোগে যে কয়জন মানুষ সত্যি কথাগুলো ভয়ডর হীন ভাবে উচ্চারণ করেছেন দ্বিধাহীন ভাবে তাদেরই একজন ছিলেন জাফর ভাই। দুই একবার সাভার গণস্বাস্থকেন্দ্রে ওনার এলাকায় কোম্পানির বার্ষিক বনভোজনের অনুষ্ঠান করেছি ,কয়েকবার ব্যাক্তিগত ভাবে ওনার সাথে দেখা করেছি। শেষ দেখা হয়েছে জুলাই ২০২২ বাংলাদেশ সফরের সময়। ওনার ধানমন্ডি হাসপাতালে একটি জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনা সভায় আমি শ্রোতা হিসাবে গিয়েছিলাম। আমার সাথে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী একজন বুয়েট থেকে স্থাপত্যবিদ এবং অঙ্কন শিল্পী। আলোচনা সভার মুখ্য আলোচক ছিলেন আমার প্রিয় শিক্ষক ডক্টর নুরুল ইসলাম। স্যার আমাকে দেখে খুশি হয়েছিলেন। সভার সভাপতি জাফর ভাই।কিন্তু দেখলাম মঞ্চে সবাই সরকারের কঠোর সমালোচক বৃন্দ চার খলিফার অন্যতম এএসএম রব , মাহমুদুর রহমান মান্না , ডাকসুর প্রাক্তন ভিপি নূর সহ অনেকে। নুরুল ইসলাম স্যার তাঁর আলোচনায় আমার প্রিয় ছাত্র সালেক সুফী কয়লা সম্পদ এবং গ্যাস নিয়ে আরো ভালোভাবে জানে বলার সাথে সাথে মিডিয়ার আলো পড়লো আমার উপর। সবাই চায় আমি কিছু বলি। একদিন আগেই তিন বছর পর দেশে গেছি। জেট লাগ্ তখনও কাটেনি। মঞ্চে সবাই সরকারের কঠোর সমালোচক। সতর্ক দৃষ্টিতে চেয়ে কিছু সাদা পোশাকে গোয়েন্দাদের উপস্থিতি অনুভব করলাম। মঞ্চে গেলাম। জাফর ভাই মঞ্চে তাই সাহসটা পেলাম। সত্যি কথা বলার বলার সোত্সাহসী যোদ্ধা পাশে রেখে গ্যাস এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেছিলাম।
জাফর ভাই কথা শেষে পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন।
মিডিয়ায় আমাকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বলে রিপোর্ট করলো। জাফর ভাইয়ের কাছে অনেক কিছুই জানার ছিল।আমি শুধু তাকে মান অভিমান ভুলে পদ্দা সেতু উদ্বোধনে যোগদানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। মিডিয়া বিশেষ করে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নজর এড়ানোর জন্য সঙ্গীকে নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলাম। যদি জানতাম সেটিই জাফর ভাইয়ের সঙ্গে শেষ দেখা তাহলে ঝুঁকি নিয়ে হলেও থাকতাম। আর কোনো দিন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, একজন গরিবের ডাক্তারের কাছ স্বাধীন দেশে ওনার সংগ্রামের কথা শোনা হলো না। অনেক বুদ্ধিজীবীর মতো উনি কোনো সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেন নি। নিজের বিশ্বাসে যখন যেটা সঠিক বেভেছেন বলেছেন। ওনার কিছু কথা কিছু উক্তির সঙ্গে আমার দ্বিমত আছে। কিন্তু ওনার সাহসী ভূমিকা ছিল অতুলনীয়।
পরপারে ভালো থাকুন। নিঃসন্দেহে স্রষ্টার প্রিয় মানুষ ছিলেন। তাই পবিত্র রমজান মাসে চলে গেলেন।