পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব যেতে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ৬৮২ হজযাত্রী। এখন পর্যন্ত এই হজযাত্রীদের বিপরীতে উড়োজাহাজের টিকিট কাটা হয়নি। টিকিটের ১৩ কোটি টাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকে জমা থাকলেও তা ছাড় করছে না তারা।

টাকা ছাড় করতে ওই ব্যাংককে দুবার চিঠি দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিলেও টিকিটের টাকা ছাড় করেনি ব্যাংকটি। এ কারণে বিপাকে পড়েছেন ওই সব হজযাত্রী। টিকিট না কাটায় উদ্বেগে দিন কাটছে তাঁদের।

ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, ওই হজযাত্রীদের হজ পালনে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়লে এর দায় প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। ৯ মে শুরু হয়েছে এ বছরের প্রথম হজ ফ্লাইট। হজযাত্রার শেষ ফ্লাইট আগামী ১২ জুন।

এ বিষয়ে কথা হয় প্রিমিয়ার ব্যাংকের মহাখালী শাখার এক কর্মকর্তার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দুটি চিঠি তাঁরা পেয়েছেন। তবে টাকা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রধান দপ্তর। সেখান থেকে অনুমোদন দেওয়ার পর এ টাকা স্থানান্তর করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মূলত দুটি হজ এজেন্সির গাফিলতিতে ৬৮২ হজযাত্রীর সৌদি আরবে যাওয়া অনিশ্চয়তায় পড়েছে। আকবর হজ গ্রুপ নামের একটি এজেন্সি এ বছর ৪২৮ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। পরে সিদ্ধান্ত বদলায়। এজেন্সিটি এ বছর কোনো হজযাত্রী পাঠাচ্ছে না।

এই ৪২৮ হজযাত্রীকে শিকদার এয়ার ট্রাভেলস নামের আরেকটি হজ এজেন্সিতে স্থানান্তর করে আকবর হজ গ্রুপ। এই এজেন্সির মাধ্যমে তাঁদের হজের প্রাথমিক নিবন্ধন করা হয়েছিল। হজযাত্রীপ্রতি ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা সংগ্রহ করে মোট ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের মহাখালী শাখায় একটি অ্যাকাউন্টে রাখা হয়।

একপর্যায়ে শিকদার এয়ার ট্রাভেলসও এসব হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পাঠাবে না বলে জানায়। পরে এই হজযাত্রীদের আল রিসান ট্রাভেল নামের আরেকটি এজেন্সিতে স্থানান্তর করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আল রিসান ট্রাভেল এজেন্সির ব্যাংক হিসাব ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখায়। অন্যদিকে এই হজযাত্রীদের বিমান ভাড়ার টাকা জমা রয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের মহাখালী শাখায়। উড়োজাহাজের টিকিট কাটতে প্রিমিয়ার ব্যাংক থাকা টাকা ইসলামী ব্যাংকে স্থানান্তরের অনুরোধ জানানো হলেও এ টাকা ছাড় করছে না ব্যাংকটি।

বিষয়টি সুরাহা করতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয় আল রিসান ট্রাভেল এজেন্সি। পরে এ টাকা ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখায় স্থানান্তর করতে প্রিমিয়ার ব্যাংকে গত মার্চে প্রথম চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। ২৬ মে আবার চিঠি দেওয়া হয় এবং ২৭ মের (গতকাল) মধ্যে টাকা স্থানান্তর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, আল রিসান ট্রাভেল এজেন্সিকে উড়োজাহাজের টিকিটের ৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা স্থানান্তরের অনুরোধ জানানো হলেও এখনো তা করা হয়নি। এতে ৪২৮ হজযাত্রীর হজ পালনে যাওয়া অনিশ্চয়তায় পড়েছে। কেন প্রিমিয়ার ব্যাংক সময়মতো হজযাত্রীদের টিকিটের টাকা স্থানান্তর করেনি, তা গতকালের মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানাতেও বলা হয় চিঠিতে।

কিন্তু প্রিমিয়ার ব্যাংক চিঠির জবাব দেয়নি বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মঞ্জুরুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রিমিয়ার ব্যাংক এখনো উড়োজাহাজের টিকিটের টাকা ইসলামী ব্যাংকে স্থানান্তর করেনি। টিকিটের টাকা কেন স্থানান্তর করেনি, তা-ও জানায়নি। মঙ্গলবার (আজ) পর্যন্ত বিষয়টি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আশা করছি, এ সময়ের মধ্যে তারা টাকাটা স্থানান্তর করবে।’ তিনি আরও বলেন, এই টাকা স্থানান্তর না হওয়ার কারণে হজযাত্রীদের হজ পালনে যাওয়া অনিশ্চিত হলে এর দায় প্রিমিয়ার ব্যাংককে নিতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

হজযাত্রীদের নিয়ে আকবর হজ গ্রুপের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে আগেও। এ বিষয়ে কথা বলতে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বরত কর্মকর্তা আলী হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংশ্লিষ্ট নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে কথা হয় আল রিসান ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উড়োজাহাজের টিকিট কাটতে না পারায় হজযাত্রীদের কাছে আমি প্রশ্নের মুখে পড়ছি। তাঁরা শুধু আমাকে প্রশ্ন করছেন, কবে টিকিট কাটা হবে। এখানে আমার কিছু করার নেই।’

এদিকে প্রায় একই রকমের ঘটনা ঘটেছে নর্থ বেঙ্গল হজ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামের একটি এজেন্সির সঙ্গে। ২৫৪ জন হজযাত্রীকে প্রথমে সৌদি আরবে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে মাজিদ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি এজেন্সি। তারা এসব হজযাত্রীর প্রাথমিক নিবন্ধন করায়। সেই সঙ্গে উড়োজাহাজের টিকিট বাবদ ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা করে মোট ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৭৯ হাজার ২০০ টাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের মহাখালী শাখায় রাখা হয়।

একপর্যায়ে মাজিদ ট্রাভেলস জানায়, তারা এসব হজযাত্রীকে সৌদি আরবে নিতে পারবে না। নর্থ বেঙ্গল হজ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসে ২৫৪ হজযাত্রীকে স্থানান্তর করে তারা। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও উড়োজাহাজের টিকিটের টাকা স্থানান্তর করেনি প্রিমিয়ার ব্যাংক।

ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সোমবারের মধ্যে নর্থ বেঙ্গল হজ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাব আল–আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের রংপুর শাখায় ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা স্থানান্তর করতে হবে। কিন্তু এ টাকাও স্থানান্তর করেনি প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

Please follow and like us:
0
fb-share-icon20
Tweet 20
Pin Share20
One thought on “৬৮২ হজযাত্রীর হজ পালন অনিশ্চিত”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Enjoy this blog? Please spread the word :)

Facebook20
YouTube20
Instagram20
20