সালেক সুফী।।
বাংলাদেশ সরকার উন্নয়ন অংশীদার এবং বন্ধু দেশগুলোর আর্থিক সহযোগিতায় যাতায়াত, বন্দর , বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে বেশ কিছু বিনিয়োগ ঘন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কয়েকটি প্রকল্প ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে ,কিছু সমাপ্তির পথে। কোবিদ ১৯ অতিমারী এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নাহলে হয়তো কয়েকটি প্রকল্প ইতিমধ্যেই শেষ হতো।আমরা জানি বেশ কিছু প্রকল্প বৈদেশিক ঋণ নিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে উক্ত প্রকল্প সমূহের ঋণ সুদসহ পরিশোধ করতে হবে. দেশবাসী দেখেছে ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশকে ইতিমধ্যে আমদানি খাতে অনেক কৃচ্ছতা আন্তে হয়েছে। বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে গাছে। সারা বিশ্ব কিন্তু সংকটে আছে। যখন মেগা প্রকল্পগুলো নেয়া হয়েছিল তখন প্রতিটি প্রকল্প একটি নিদৃষ্ট বাস্তবায়নকাল ধরে সমীক্ষা করা হয়েছিল। সময় বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। স্বভাবতই এখন মেগা প্রকল্পগুলোর দেন পরিশোধে বাংলাদেশকে এখন থেকেই পরিস্থিতি মোতাবেক পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নাহলে ২০২৪-২৮ মেয়াদে সরকারকে কঠিন অবস্থা মোকাবিলা করতে হতে পারে.মেগা প্রকলগুলো এবং তাদের উপযোগিতা নিয়ে আলোকপাত করা যাক।
পদ্দা বহুমুখী সেতু প্রকল্প : মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পহলো প্রতিটা পদ্দা নদীর উপর সড়ক এবং রেল সেতু। দ্বিতল এই সেতুর উপর দিয়ে ইতিমধ্যে চালু সড়ক পথ দক্ষিণ বাংলার ১৯ টি জেলাকে ঢাকা তথা সারা দেশের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। অচিরেই রেল পথ চালু হলে ঢাকা – ফরিদপুর -যশোর -খুলনার দূরত্ব কমে যাবে। এই প্রকল্পের সেতু অংশ বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল থেকে বাস্তবায়ন করেছে। রেল পথের জন্য চীন সরকারের আর্থিক সহায়তা নেয়া হয়েছে। বছরের শেষ নাগাদ মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত রেলপথ চালু হওয়ার কথা।জুন ২০২৪ নাগাদ এই পথে ঢাকা থেকে যশোর রেলপথ চালু হবে। সড়ক পথ চালু হওয়ায় অর্থনীতির উপর সুফল দৃশ্যমান হচ্ছে। রেলপথ চালু হলে এবং পর্যায়ক্রমে মংলা এবং পায়েরা বন্দর পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপিত হলে ২০৩০ নাগাদ অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধিত হবে। কালক্রমে এই সেতু আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। আমি এই প্রকল্প নিয়ে অকারণ উৎবিঘ্নতার কারণ দেখি না।
কর্ণফুলী নদী তলদেশের সুড়ঙ্গ পথ:
চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় নির্মাণের শেষ পর্যায়ে এখন বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী নদী টানেল প্রকল্প। টানেলটি সাগর মোহনার কাছাকাছি কর্ণফুলী উত্তর -দক্ষিণ পাড়কে হংকং , সাংহাই মতো সংযুক্ত করে দক্ষিণ কর্ণফুলী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি কক্স।স বাজারের সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ অনেক সহজ করবে। আমরা জানি কক্স’স বাজারে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে। সেখানে বিদ্যুৎ জ্বালানি হাব স্থাপিত হচ্ছে। কর্ণফুলী টানেল কক্স;স বাজারকে চট্টগ্রাম তথা সারা দেশের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্পের আর্থিক উপযোগিতা নিয়েও প্রশ্ন করার কোনো কারণ নেই. তবে দেখতে হবে উভয় প্রান্তের যোগাযোগ ব্যবস্থা কত দ্রুত আধুনিক এবং যুগোপযোগী হয়. বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানি , পর্যটন খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে এই প্রকল্প অবদান রাখবে। দক্কিন এশিয়ায় এটি অন্যতম প্রথম নদী তলদেশের সুড়ঙ্গ পথ হবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
বন্ধু দেশ রাশিয়ার আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তায় পাবনার রূপপুরে সমাপ্তির পথেই ২ X ২০০ = ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। VVER ১২০০ third generation plus প্রযুক্তি ব্যাবহৃত এই প্রকল্পটি আধুনিক সর্বোন্নত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তৈরী হচ্ছে। ১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে তৈরী এই প্রকল্প ২০২৪ চালু হলে ২০২৫ নাগাদ সার্বক্ষণিক ভাবে বাংলাদেশ ২৪০০ মেগাওয়াট সবুজ বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্নভাবে পাবে। অনেকে ভারতের একটি একই ধরণের প্লান্টের বিনিয়োগের কথা তুলে সমালোচনা করছেন। বাংলাদেশকে ৯৫% সামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়েছে। ভারতে সেখানে অধিকাংশ সামগ্রী পাওয়া যায়।ওদের জনবল আছে।আমাদের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে বলা যায় প্লান্ট থেকে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সংযুক্তি সমূহ নির্মাণে বিলম্ব করেছে পিজিসিবি. তাই বিদ্যুৎ পেতে কিছুটা বিলম্ব হবে. অন্যথায় এই প্রকল্প বাংলাদেশের টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
নিম্নের মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে পরবর্তী পর্বে লিখবো
মাতারবাড়ি -মহেশখালী জ্বালানি -বিদ্যুৎ হাব এবং গভীর সমুদ্র বন্দর
চট্টগ্রাম – কক্স;স বাজার রেল সংযোগ
ঢাকা মেট্রো প্রকল্প
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প
হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল
পায়েরা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র
তবে শঙ্কার বিষয় এতগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে পরিচালনার মতো প্রশিক্ষিত জনবল আছে কিনা। সরকারকে নিবিড় পরিকল্পনার মাধ্যমে জনবল সৃষ্টি করে প্রণোদনার মাদ্ধমে ধরে রাখতে হবে।
চলবে।