সালেক সুফী।।
মহা আতংক ছড়িয়ে সীমিত প্রতিক্রিয়া ফেলে মখা ঘূর্ণিঝড় চলে গেলো। ঝড় যতনা প্রভাব ফেলেছে গ্যাস সংকট ,বিদ্যুৎ সংকটে ক্ষতি হয়েছে বহুগুন। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন মত বিতর্ক ছিল।বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বার বার বলছিলো মখা সুপার সাইক্লোন হবে না, ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ড ফল বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে আসবে না। সেন্ট মার্টিন , কক্স’সবাজারের এক পাশ দিয়ে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলে যাবে। অন্যদিকে কানাডা থেকে একজন প্রবাসী বাংলাদেশী অধ্যাপককে উদৃত করে বাংলাদেশের কিছু ইলেকট্রনিক মিডিয়া জানাচ্ছিল ঘূর্ণিঝড় সুপার সাইক্লোন হবে এবং ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র বাংলাদেশ মুখী। এমতাবস্থায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে সমুদ্র বন্দর থেকে সকল বড় জাহাজ গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেয়া হয় , কক্স’স বাজার এবং চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করা হয়। সারাদেশে নৌযান চলাচল স্থগিত থাকে। এফসারু গুলোর সাথে চুক্তি অনুযায়ী সুপার সাইক্লোনের পূর্বাভাস থাকলে এগুলো নিরাপত্তার জন্য গভীর সাগরে অথবা নিরাপদে কোথাও সরিয়ে নেয়া যায়।মার্কিন কোম্পানি এক্সসেলারেট তাদের এফসারু সরিয়ে নেয়।সামিট প্রস্তুতি নেয়ার সময় ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে পড়ে। স্থানান্তর করার দরকার হয় নি। কিন্তু দুটি FSRU অপারেশন স্থগিত করায় জাতীয় গ্যাস গ্রীডে সরবরাহ ৬৫০-৭০০ এমএফসিএফডি কমে যায়।এমনিতেই গ্যাস সংকট তার পর এই অবস্থায় বিদ্যুৎ সংকট গ্যাস সংকট সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়।চট্টগ্রাম অঞ্চল সম্পূর্ণ গ্যাস শূন্য হয়ে পরে।দেশ জুড়ে ১০-১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ লোড শেড্ডিং হয়।গ্রহস্থলী গ্যাস ব্যাবহারকারীরা মহা সংকটে পরে। শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হয়।
এমতাবস্থায় জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী পরিস্থিতির প্রকৃত মূল্যায়ন না করেই জানান গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনে ডুবুরি এনে FSRU পুনসংযোগের সময়ের কথা বলেন। সংযোগ পাইপ লাইন বা সাবমেরিন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়ে থাকলে ৩-৪ দিনের বেশি সময় লাগার কথা না।হয়তো তার আগেই এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।এই ধরণের পরিস্থিতিতে পেট্রোবাংলা বা আরপিজিসিএল ছাড়া অন্য কারো কিছু না বলাই ভালো। ভুল কথায় আতঙ্ক ছড়ায় যা এক্ষেত্রে হয়েছে। যাহোক শেষ পর্যন্ত একটি ভাসমান টার্মিনাল অপারেশন শুরু করেছে। আর একটিও সহসাই চলে আসবে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন। FSRU গুলো চুক্তি অনুযায়ী বছরে ২৮৯ দিন অপারেশন করার কথা।গত কয়েক বছর বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ৯৫% সময় কাজ করেছে। সুপার সাইক্লোন আভাস দেয়া হলে ওরা অপারেশন চুক্তি অনুযায়ী স্থগিত করেছে।
সংকট হলো নিজেদের উৎপাদন ২২০০ এমএমসিএফডি এবং আমদানিকৃত এলএনজি ৬৫০ এমএমসিসিএফডি নিয়ে মোট গ্যাস সরবরাহ ২৮৫০ এমএমসিএফডি হলেও চিদা ৪০০০-৪৫০০ এমএমসিএফডি। নিজেদের উৎপাদন কমছে। ২০২৫ নাগাদ ২০০০ এমএমসিএফডির নিচে চলে যেতে পারে। এই সময়ের মাঝে যদি জ্বালানি উপদেষ্টার কথা মতো মহেশখালী এবং পায়েরায় দুটি ভাসমান টার্মিনাল থেকে এলএনজি আসে তাহলেও সর্বোচ্চ ২৯০০-৩০০০ এমএমসিএফডি সরবরাহ পাওয়া যাবে। তার পরেও ঘাটতি থাকবে ১০০০ এমএমসিএফডির উপর।বাংলাদেশ এখনই এলএনজি কিনতে হিঁম সিম খাচ্ছে। কয়লা , তরল জ্বালানি কিনতে ডলার জোগাড় করতে পারছে না। কি হবে ২০২৫, ২০২৬ জ্বালানি নিরাপত্তার ? হয়তো তখন জ্বালানি উপদেষ্টা থাকবেন না।কিন্তু বাংলাদেশের জনগণকে সরকারের ভ্রান্ত জ্বালানি পরিকল্পনার জন্য ভুগতে হবে। একমাত্র উপায় যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে নিজেদের পার্থমিক জ্বালানি গ্যাস , কয়লা উত্তোলন , নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন।
জ্বালানি বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞদের কাজের ক্ষেত্র। সেখানে সবার সবকিছু সব সময় না বলাই উচিত। জনগণ বিভ্রান্ত হয়।