সালেক সুফী: অবশেষে চতুর্থ দিন লাঞ্চ বিরতির পর ৭ উইকেটে জয় নিয়ে বাংলাদেশ জানুয়ারী ২০২৩র পর ৯ম টেস্টে জয় পেলো। নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাউন্ট মনগানিউতে সেই ঐতিহাসিক জয়ের পর বাংলাদেশ পর পর আটটি টেস্ট পরাজয়ের পর জয় পেলো টেস্ট পরিবারে নবাগত আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে। বিশ্বাস করুন যেকোনো টেস্ট খেলা দেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট খেলে এটি বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। টেস্ট ক্রিকেটে সীমিত অভিজ্ঞ, ২০২৯ র পর প্রথম টেস্ট খেলা আয়ারল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ১৫৫ রান পিছিয়ে থেকেও ম্যাচের তৃতীয় দিনে চমৎকার ক্রিকেট খেলে ১৩১ রানে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশের চিন্তার আকাশে বিন্দু বিন্দু মেঘ জমিয়েছিল। অনভিজ্ঞ দলটি পারেনি চতুর্থ সকালে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জিং টার্গেট ছুড়ে দিতে। শুরুতেই এবাদত শেষ দুটি উইকেট তুলে নিলে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয় ২৯২ রানে। সর্বসাকুল্যে লিড দাঁড়ায় ১৩৭। হাল ছাড়েনি আয়ারল্যান্ড। এই রান তুলতেই লিটন, শান্ত, তামিমের উইকেট তুলে নেয় ওরা। উইকেট রক্ষক টাকার সহজ স্টাম্পিং মিস না করলে ৪ উইকেট পড়ে যেত বাংলাদেশের।পরাজয়েও মাথা উঁচু করেই শেষ করেছে আয়ারল্যান্ড। ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসটি ৩০০ -৩২০ করলে অথবা দ্বিতীয় ইনিংসে আরো ৫০ রান যোগ করলে বাংলাদেশের জয় আরো কষ্ট সাধ্য হতো। ১৩ রানে ৪ উইকেট হারানো দলের ২৯২ রানে ইনিংস শেষ করা টেস্ট ইতিহাসেই বিরল ঘটনা।
যাহোক টেস্ট পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এখন পরিকল্পনা এতে এগিয়ে যেতে হবে। টিম এবং টিমের ব্যবস্থাপনাকে মনে রাখতে হবে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওডিআই, টি ২০, টেস্ট জয় করে বাংলাদেশ কোনো ফরম্যাটেই অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড হয়ে যায় নি। শেষ টি ২০ ম্যাচে পরাজয় এবং টেস্ট ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ড দলের খেলা থেকে বাংলাদেশের অনেক কিছু শিক্ষার আছে। প্রথম ইনিংসে সাকিব মুশফিকের জুটি প্রতি আক্রমণ করে খেলে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছিলো। তৃতীয় দিন দেয়ালে পিঠ রেখে যেভাবে খেলেছে ৭ জন প্রথম টেস্ট খেলোয়াড় নিয়ে আয়ারল্যান্ড তা থেকে বাংলাদেশের নবীন প্রবীণ সব খেলোয়াড়দের অনেক কিছু শিখতে হবে।
প্রথম ইনিংসে অনবদ্দ ১২৬ এবং দ্বিতীয় ইনিংস সাবলীল অপরাজিত ৫১ রান করে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়ে মুশফিকুর রহিম নিন্দুকদের মুখে চপাটাঘাট করেছে। মুশফিক প্রমান করেছে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড়। তাইজুল এই টেস্টে ৭ উইকেট নিয়ে আবারো প্রমান করলো ওকেও সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। উইকেটে পেস বোলারদের জন্য যথেষ্ট কিছু ছিল না। তবুও এবাদত ভালো করেছে।
তামিম খেলা দেখে মনে হয়েছে ওর সেরা সময় পেরিয়ে এসেছে। লিটন ছটফট করছে বেশি। শেবাগের মতো মারকুটে ব্যাটসম্যান হতে আরো অনেক পথ পারি দিতে হবে। সাকিব কেন এই টেস্টে বোলিং করা থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে সেটি প্রশ্নবোধক হয়ে থাকুক।
আয়ারল্যান্ড কিন্তু অন্য দল এমনকি একই সঙ্গে টেস্ট মর্যাদা পাওয়া আফগানিস্থানের মতো বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পায় না। নিজেদের দেশেও লম্বা ভার্শনের ক্রিকেট খেলার সুযোগ সীমিত। সেই অনুযায়ী নিজেদের চতুর্থ টেস্ট ম্যাচে অনেক অর্জন আছে ওদের। হেরি টেক্টর দুই ইনিংসে অর্ধ শত করেছে। অভিষিক্ত লড়কান টাকার ১০৮ রান করে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসাবে নাম লেখালো। অ্যান্ড্রু এন্ডি ম্যাকব্রাইন ম্যাচে ৭ উইকেট এবং কঠিন পরিস্থিতিতে ৭২ রান করে প্রমান করেছে একসময় সে ম্যাচ জয়ী চৌকষ খেলোয়াড়ে পরিণত হবে। আয়ারল্যান্ড যাচ্ছে শ্রীলংকায়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় কিছুটা ধাতস্থ হয়ে ওঠায় ওরা লড়াই করবে মনে হয়।
ম্যাচ শেষে যতই বলুক সাকিব ওদের কৌশল ছিল আক্রমণাত্মক খেলা। সেই কৌশল চুলচেরা মূল্যায়নে বিপদ ডেকে আনতে পারতো। প্রথম ইনিন্স অবশ্যই বাংলাদেশের ৪৫০ রান করা উচিত ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে বাগে পেয়েও কেন আয়ারল্যান্ডকে তৃতীয় দিন ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়া হলো?
জয় জয়ের জননী হয়। আশা করি জয়ের ধারা বজায় খাবে। পরিস্থিতি মাফিক দলকে কৌশল পাল্টে মানিয়ে নিতে হবে।