সালেক সুফী।।
রমণীয় ক্রিকেটের বহুরূপী প্রদর্শনীতে সমৃদ্ধ আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট ম্যাচে এটি বাংলাদেশের প্রথম জয় এবং সেই হিসাবে নতুন মাইল ফলক। ২০২২ জানুয়ারী মাসে নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মাগনুইতে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর ৮টি টেস্ট ক্রমাগত হেরেছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে নবীন আয়ারল্যান্ডকে পেয়ে জয়ের জন্য মরিয়া বাংলাদেশ পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে নেমেছিল।একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি কাঙ্খিত ভাবে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জিতে নিলেও টেস্ট পরিবারে নবাগত আয়ারল্যান্ডের অর্জন অনেক। খেলায় হার জিত থাকবেই। আয়ারল্যান্ড কিন্তু হেরেও নিজেদের গর্বিত করেছে।
টস জিতে প্রথম ব্যাটিং করে অনভিজ্ঞ আয়ারল্যান্ড ২১৪ রানে গুটিয়ে গিয়েছিলো প্রথম ইনিংসে। জবাবে বাংলাদেশ মুশফিক (১২৬) ,সাকিব (৮৭) রান এবং এই জুটির অনবদ্দ বাটিং, লিটন ,মিরাজের অবদানে ৩৬৯ রান করে ১৫৫ রানের বিশাল লিড পেয়েছিলো। দ্বিতীয় দিন শেষে ২৭/৪ উইকেট তুলে নিয়ে তৃতীয় দিনে ম্যাচ শেষ এমনকি ইনিংস ব্যাবধানে জয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল অবাংলাদেশ। ক্রিকেট বিশ্বকে বিস্মিত করে তৃতীয় দিনে দেয়ালে পিঠ রেখে বৈরী অনভ্যস্থ পরিবেশে বিস্ময়কর ব্যাটিং করলো অতিথি দল। শুরু করেছিল হ্যারি টেক্টর ম্যাচে দ্বিতীয় অর্ধশত রান করে। বিস্মিত করেছে অভিষেকে ১০৮ রান করা লড়কান টাকার। ভালো ইনিংস উপহার দিয়েছে অফ স্পিন অল রাউন্ডার এন্ডি ম্যাকব্রাইন (৭১)।
দারুন ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো আয়ারল্যান্ড তৃতীয় দিন শেষে ১৩১ রানে এগিয়েছিল। অধিকাংশের ধারণা ভুল প্রমান করে মাত্র চতুর্থ টেস্ট খেলা আয়ারল্যান্ড কাঁপিয়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশকে। চতুর্থ দিন সকালে আর ৫০ রান যোগ করলেই ফলাফল অন্য রকম হতেও পারতো। কিন্তু ওই দিন সকালেই এবাদত ভালো বোলিং করে গুটিয়ে দেয় আয়ারল্যান্ড ইনংস। বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩৮ রান।
সেই রান করতেই শান্ত। তামিম ,লিটনের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ টেস্ট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক প্রথম ইনিংসে ১২৬ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও অপরাজিত ৫১ রান করে জয়ের বন্দরে বিরান বাংলাদেশের রানের তরী। কিছু প্রশ্ন কিছু অর্জন নিয়ে টেস্ট ম্যাচ শেষ করে বাংলাদেশ। সাকিব ,লিটনকে বিশ্রাম দিয়ে কি জয় পেতো বাংলাদেশ? কেন বিশ্বের সেরা চৌকষ খেলোয়াড় সাকিব টেস্টে নিজেকে গুটিয়ে রাখলেন?
যাহোক টেস্টে আয়ারল্যান্ডের অর্জন হ্যারি টেক্টরের উভয় ইনিংসে অর্ধশত , লড়কান টাকারের অভিষেকে শত রান।এন্ডি ম্যাকব্রাইনের ৭ উইকেটের পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসে ৭১ রান। বৈরী আবহাওয়ায় কোনঠাসা অবস্থান থেকে আয়ারল্যান্ড যেভাবে লড়াই করে ফিরেছে টেস্টে সেটি উপমা হয়ে থাকবে। যেভাবে ম্যাচ শেষে সাকিব ব্যাখ্যা দিয়ে থাকুক বাংলাদেশ ভালো খেলে নি। তামিমের ব্যাটিং মনোপুত হয় নি। শান্ত উভয় ইন্ন্যান্স বার্থ হয়েছে। ছটফট করেছে লিটন , সাকিব ব্যাটিং ওর ছন্দে করলেও পরিমিত বোলিং না করে দলকে বঞ্চিত করেছে। একমাত্র মুশফিক আপন ছন্দে ব্যাটিং করে নিন্দুকদের মুখে তালা দিয়েছে। বাংলাদেশের পেস বোলাররা তিন পেসার নিয়ে খেলার যথার্থতা প্রমান করেনি। তবে টেস্ট স্পেশালিস্ট তাইজুল ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে প্রমান করছে টেস্ট বলার হিসাবে ওকে উপেক্ষা করা অনুচিত।
সব শেষে বলবো বাংলাদেশের কৌশলে কিছুটা গলদ ছিল। বাংলাদেশ এখনো অস্ট্রেলিয়া ,ভারত , ইংল্যান্ড হয়ে যায়নি যে সব পরিস্থিতিতে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী মানিয়ে না নিলে বড় দল গুলোর সঙ্গে নিয়মিত জিততে পারবে না।