সালেক সুফী।।
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশী মহল এখন সোচ্চার। পশ্চিমা দেশগুলো , আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহ বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুসংহত করার জন্য অংশগ্রহণ মূলক বিশেষত অবাধ ,সুষ্ঠু নির্বাচন চাইছে। নির্বাচন নিয়ে বিদেশী মিশন গুলো কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়েও সরকার সহ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। কিছু দিন আগে সরকারি দলের কিছু নেতা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে কুটনীতিক দের সঙ্গে সভা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেছে। বিরোধী দল নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। প্রশ্ন হলো ঘরের সংকট বাইরের শক্তির সাথে আলাপের চেয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনার পথ কেন খুলছে না?
বাংলাদেশে এবছরের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ জানুয়ারী জাতীয় নির্বাচন হবে। ক্ষমতাসীন দল ক্রমাগত তিন টার্মের শেষ বছর পার করছে। সাফল্য ব্যার্থতার চুলচেরা পরিবর্তন করলে দেখা যাবে প্রতিবেশী নেপাল, পাকিস্তান , শ্রীলংকা এমনকি ভারত থেকেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। সার্ক অঞ্চলে কোনো দেশেই নিখাদ গনত্রন্ত বলে কিছু নেই। বাংলাদেশের প্রশ্ন সার্বিক অবস্থা ২০০৯ থেকে অনেক পাল্টে গেছে। অর্থনীতি বিশাল হয়েছে , দেশ জুড়ে সড়ক , রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বহুমাত্রায় বিস্তৃত ,বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু এর পাশাপাশি দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে , রাজনীতিতে অর্থ ,পেশী শক্তির নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে। একশ্রেণীর মিডিয়া সরকারের লেজুড় বৃত্তি ,অন্য শ্রেণী উদ্দেশ্যেমূলক তথ্য প্রকাশ করছে। করোনা পরিস্থিতি অন্নান্য দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভালো সামাল দেয়ার পর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে, বাজারে পন্য সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও মূল্য বেড়ে সীমিত আয়ের মানুষদের নুন আন্তে পান্তা ফুরোনোর অবস্থা। ভুল পরিকল্পনায় জ্বালানি সংকট সৃষ্টি হওয়ায় শিল্প কারখানা সমূহ উৎপাদন এবং রপ্তানি সংকটে পড়েছে। ডলার সংকটে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় কমতে থাকায় সরকার পুনরায় আইএফসি ,বিশ্বব্যাংকের দুয়ারে ঋণ প্রদানে অগ্রসর হয়েছে। ঋণের শর্ত হিসাবে জ্বালানি বিদ্যুৎ মূল্য প্রচলিত প্রথা এড়িয়ে কয়েক দফায় বাড়িয়েছে, দেশ থেকে একশ্রেণীর সরকার ঘনিষ্ট মহল বিপুল পরিমান অর্থ পাচার করায় বিদেশী মিডিয়ায় অনেক তথ্য সমৃদ্ধ প্রতিবেদন আসছে।
এইসব বিষয় নিয়ে সরকার এবং বিরোধী দল রাজপথে মুখোমুখি অবস্থানে। উভয় দল ঘরের সংকট বিদেশী শক্তিগুলোর কাছে নিয়ে গাছে। এটি দেশের ভাবমূর্তির জন্য কতটা গ্রহণযোগ্য সেটি নিয়ে কেউ ভাবছে না।রাজপথে রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত। অন্তত বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন কোনভাবেই স্বচ্ছ ,নির্বাচন হয়নি। সরকারের কিছু বেপরোয়া অংশ সুবিধাবাদী আমলা এবং পুলিশ প্রশাসনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে প্রহসনমূলক নির্বাচন করায় বিপুল উন্নয়ন করেও সরকার দেশি বিদেশী মহলের আস্থা অর্জন কতটুকু করেছে সেটি প্রশ্ন বিদ্ধ। আরো বোরো সমস্যা হলো আঞ্চলিক এবং বৈষয়িক রাজনীতির অশুভ প্রভাব। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ প্রধান বিদেশী শক্তিগুলোর কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষত বঙ্গপোসারে জ্বালানী অনুসন্ধানে নিজ দেশের কোম্পানি নিয়োজিত করে অবস্থান নিতে চাইছে একটি পরাশক্তি। চীন বিরোধী একটি জোটে বাংলাদেশকে যোগদানের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে কিন্তু চীন ,ভারত ,রাশিয়া ,জাপান ,কোরিয়া নানা কাজে জড়িত আছে। তুলনামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ,যুক্তরাজ্য , অস্ট্রেলিয়া বা পচিম ইউরোপের বিনিয়োগ অনেক কম।বিগত সময়ে রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় থাকলেও এখন কিন্তু সরকারের অবস্থান চাপের মুখে।
কেউ স্বীকার করুক বা নাই করুক কিছু মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন কিন্তু অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে দিয়েছে। ভাবুন পদ্দাবহুমুখী সেতুর কথা। দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে সাড়া দেশের মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ হয়ে গেছে ,অচিরেই রেল যোগাযোগ হবে। পায়রা এবং রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হওয়ায় দক্ষিণ অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি অনেক উন্নত। কর্ণফুলী নদী তলদেশের সুড়ঙ্গ পথ খুলে গেলে দক্ষিণ পূর্ব বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন দুয়ার খুলে যাবে। ভারত থেকে পাইপ লাইন ডিজেল আসছে ,অচিরে গভীর সমুদ্র থেকে বড় জাহাজে আনা জ্বালানী তেল পাইপ লাইন দিয়ে সরাসরি আসবে চট্টগ্রাম তেল শোধনাগারে। মেট্রো রেলের এক অংশ চালু হয়েছে , এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশ চালু হলে উত্তরা বাসি এবং ঢাকা এয়ারপোর্ট যাতায়াতকারীদের কিছুটা স্বস্তি মিলবে। আশা করি গাজপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস রেপিড ট্রানজিট অচিরে চালু হলে অসহনীয় দুর্ভোগ কাটবে। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রভাব কতটুকু পরে দেখতে হবে।চট্টগ্রাম -কক্স’স বাজার রেল পথ নির্মাণ , কক্স;স বাজার বিমানবন্দর আধুনিকায়ন , মাতারবাড়ি জ্বালানী বিদ্যুৎ হাব নির্মাণ শেষ হলে শুভ প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে শুভ প্রভাব সৃষ্টি হবে।সরকার আমলা অতিনির্ভর এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সরকার ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন থাকতো। বিশেষত জ্বালানি খৎ উন্নয়নে সরকার পুরোপুরি বার্থ।
বিদেশী ঋণ নির্ভর এই সব প্রকল্পের আর্থিক দায়ভার মেটানোর জন্য বাংলাদেশে প্রয়োজন ভালো ভাবমূতির জনগণের ভোট নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব মূলক সরকার। সরকার যদি নিজেদের অবস্থান জনগণের কাছে সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরে জনঘনিস্ট মানুষদের নির্বাচনে সম্পৃক্ত করতে পারে তাহলে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ব্যাবস্থাপনায় সরকারের ভীত হবার কারণ নেই। তবে মন্ত্রী সাংসদ অনেকের বিষয়েই জনমনে দ্বিধা সংশয় আছে। সরকার প্রধান নিঃসন্দেহে অবহিত আছেন। ইতিমধ্যেই তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিরোধী দলগুলো একপর্যায়ে নির্বাচনে আসবে। নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে ক্ষমতার পালা বদল হবার সুযোগ নেই।