ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াতেন সাখাওয়াত হোসেন। তাঁর ফেসবুক আইডি ঘুরে পাওয়া গেছে বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ানোর ছবি। ছেলের বিদেশভ্রমণের কথা নিশ্চিত করেছেন তাঁর বাবা সাহেদ আলীও। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ইচাইল গ্রামের বাসিন্দা সাহেদ আলী পেশায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে সাহেদ আলীর দুই ছেলে রয়েছেন। তাঁরা হলেন মো. সাখাওয়াত হোসেন (৩৪) ও সাইম হোসেন (২০)। গত ৮ জুলাই সিআইডির করা মামলায় সাখাওয়াত এজাহারভুক্ত ১৪ নম্বর এবং সাইম ১৫ নম্বর আসামি।

প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকজন জানান, সাহেদ আলী ময়মনসিংহ নগরীর দিঘারকান্দা বাইপাস এলাকার কাদুরবাড়ি মোড়ে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে এ পেশায় থাকা সাহেদ আলী এখনো নিজের আধা পাকা ঘরের বারান্দায় প্লাস্টার সম্পন্ন করতে পারেননি। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে সাখাওয়াত কওমি মাদ্রাসায় অল্প পড়ালেখা করেছেন। আর সাইম ২০১৮ সালে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হলেও আর পড়াশোনা করেননি। গত দুই বছর আগে সাইম বড় ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হন। তাঁদের বোন ঢাকায় একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। আর ছোট বোন ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে পড়ছেন।

স্বজনেরা জানান, সাখাওয়াত এলাকায় অটোরিকশার ব্যাটারিতে ভরানোর অ্যাসিডের ব্যবসা করতেন। কিন্তু সেই ব্যবসা তেমন ভালো না চলায় ছেড়ে দেন। পরে রাজধানীর রাজারবাগ এলাকায় গিয়ে নতুন পানির ফিল্টার বিক্রি ও পুরোনো পানির ফিল্টার মেরামতের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম সাখাওয়াত এন্টারপ্রাইজ। সেটির সিইও হিসেবে পরিচয় দিতেন সাখাওয়াত। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকাতেই থাকতেন সাখাওয়াত।

সাখাওয়াতের ফেসবুক আইডিতে দেখা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে তিনি হঠাৎ বিদেশ সফর শুরু করেন। ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত একেকটি বিদেশ সফরের ছবি প্রকাশ করতেন।

সাহেদ আলী আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লন্ডন, কানাডা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছে আমার ছেলে সাখাওয়াত। পাঁচ-ছয় বছর ধরে বিদেশ সফরগুলো শুরু হয়।’ সাহেদ আলী দাবি করেন, ‘আমার ছেলে কোম্পানির পক্ষ থেকে বিদেশে ঘুরতে যেত, নিজের টাকায় বিদেশ সফর নয়।’ তবে ছেলে কোন কোম্পানি থেকে বিদেশে যান, সেটি তিনি বলতে পারেননি।

এদিকে সাখাওয়াত গত দুই বছর আগে নতুন প্রাইভেট কারে এলাকায় এলে মানুষের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ১১ লাখ টাকায় প্রাইভেট কারটি ছেলে কেনেন বলে জানিয়েছেন বাবা সাহেদ আলী। কিন্তু অল্প দিনে এ পরিবর্তন অস্বাভাবিক মনে হয়েছে বলে জানান প্রতিবেশীরা।

সাখাওয়াত এসব ব্যাংকঋণের টাকায় করেছেন দাবি করে সাহেদ আলী বলেন, ‘ব্যাংকের ঋণের টাকায় ব্যবসা করে, ওদের কোনো টাকা নেই। ব্যাংকে প্রায় এক কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। আমি জমি বিক্রি করে দোকান দিছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছোট ছেলে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছিল। বড় ছেলের ব্যবসা বড় হওয়ায় বড় ভাইয়ের ব্যবসার সঙ্গে দুই বছর ধরে সহযোগিতা করছিল। সাখাওয়াত একাই ব্যবসা করত। ধীরে ধীরে ব্যবসা বড় হয়েছে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে সাহেদ আলী দাবি করেন, ‘আমার ছেলে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে জড়িত থাকলে তার ব্যবসা কে দেখত? সে চক্রে জড়িত নয়। তারা যে ব্যবসা করে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকানে বসে থাকতে হয়, মেরামতের কাজে যেতে হয়। আমার ছেলেরা ব্যবসায় যেহেতু এগিয়ে যাচ্ছে, সে জন্য তাদের দাবিয়ে দেওয়ার জন্য এসব কথা বলছে।’

সাখাওয়াতের প্রতিবেশী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘নতুন গাড়ি কিনে বাড়িতে আসা ও প্রায়ই বিদেশ সফর আমাদের আশ্চর্য করেছে। যারা নিজের বাড়ি ঠিক করতে পারে না, তারা কীভাবে বিদেশ ঘুরে বেড়ায় সেটি রহস্যজনক। তারা প্রকৃত দোষী হলে দেশের আইন অনুযায়ী বিচার যেন হয়।’ তিনি বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে দুই ভাইকে দেখে এলাকার মানুষ অবাক হয়েছে। তারা এলাকার মানুষকে চাকরি দেবে বলে কখনো টাকা নিয়েছে, এমন কোনো ঘটনা শুনিনি।’

Please follow and like us:
0
fb-share-icon20
Tweet 20
Pin Share20
One thought on “পিএসসি প্রশ্নপত্র ফাঁসে গ্রেপ্তার সাখাওয়াত হোসেন”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Enjoy this blog? Please spread the word :)

Facebook20
YouTube20
Instagram20
20