সালেক সুফী।।
তৎকালীন জ্বালানী বিদ্যুৎ মহাসংকট মোকাবিলার জন্য অন্যতম উপায় হিসাবে ২০২০ সালে জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ এক্ট নামে একটি দুই বছর আইন পাশ হয়। দেশে প্রচলিত জাতীয় ক্রয় নীতি এড়িয়ে টেন্ডার বিহীন দ্রুত ঠিকাদার নিয়োগ করে সংকট সমাধানের স্বল্প কালীন গ্রহণযোগ্যতা মেনে নেয়া যায়। সরকার দাবি করে ওরা এই পন্থায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে ঘরে ঘরে। উপরন্তু বিপুল বাড়তি বিদ্যুৎ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বার বার বিতর্কিত আইনটির মেয়াদ বৃদ্ধি করে আমলা নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাটি ২০২৬ পর্যন্ত কেন করা হলো ? দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাচুর্য থাকা সত্বেও জ্বালানি নিরাপত্তা কেন সৃষ্টি হয় নি ? কেন জ্বালানি সংকট? কেন পিডিবি ,পেট্রোবাংলা অর্থ সংকটে ? এই সব প্রসঙ্গের আগে জানতে বুঝতে হবে কেন এখনো জরুরী ( ২বছর মেয়াদের) আইন ১৬ বছর থাকতে হবে? দুষ্ট লোকেরা বলে আইনটি সরকার ঘনিষ্ট ব্যাবসায়ীদের প্রচুর মুনাফা বানিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বানানোর সুযোগ দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমলা এবং কিছু কামলা বানিয়েছে দুর্নীতির রাজা।
২০০৯ সরকার যখন প্রথম টার্মে ক্ষমতায় আসে তখন দেশ জুড়ে তীব্র বিদ্যুৎ সংকট ( ১০-১২ ঘন্টা লোড শেড্ডিং) .জ্বালানি সংকট। স্বল্প স্থায়ী। মদ্ধ মেয়াদি ,দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি সরকার ২০১০ সালে পাশ করলো স্পেশাল এক্ট। প্রচলিত জাতীয় ক্রয়নীতির অত্যাবশ্যকীয় শর্তগুলো পূরণ ছাড়াই মালামাল এবং সেবা ক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট আমলা কামলাদের জবাবদিহি থাকবে না। সংকটের কথা বলে ২ বছর মেয়াদের এই এক্ট ২০১২ শেষ হবার কথা। কিন্তু এরই মাঝে রক্তের স্বাদ পেয়ে রয়েল বেঙ্গল হয়ে যাওয়া একটি গোষ্ঠীর প্রভাবে এক্টের মেয়াদ ২০২৬ পর্যন্ত। আমি হলপ করে বলতে পারি আগামী নির্বাচনে নতুন সরকার আসলেও এটি বাতিল হবে না।
দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সরকারি হিসাবেই ২৫০০০ মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু এখন ১৪০০০-১৫০০০ মেগাওয়াট নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সরবরাহের সক্ষমতা নাই সরকারের। কেন নাই? করোনা বা ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে লাভ নাই।দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ এক্ট জ্বালানি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রসার ঘটিয়েছে ব্যাপক ভাবে। কিছু মানুষ ফুলে ফেঁপে উঠেছে। বিপুল উদবৃত্ত ক্ষমতা নিয়েও চাহিদা মেটাতে বার্থ পিডিবি। পেট্রোবাংলা সঠিক কাজে বিনিয়োগ না করে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে বিপুল অর্থ অপচয় করে দেউলিয়া হবার উপক্রম। কয়লা কেনার অর্থ নেই, এলএনজি কেনার ডলার নেই।ব্যার্থতার দায়ভার তুলে দেয়া হচ্ছে ভোক্তাদের উপর বার বার মূল্য বৃদ্ধি করে।আজ যে জ্বালানী বিদ্যুতের উপর থেকে সাবসিডি পরিহার করার চাপ তার মুলে রয়েছে সরকারের দুর্নীতি সিক্ত ভুল পরিকল্পনা। সরকারকে অবিলম্বে জরুরি আইন বাতিল করতে হবে।