সালেক সুফী।।
প্রায় ৫ বছর পর ঢাকা ফিরে যাবার সুযোগ আমাকে জ্বালানী সেক্টরে এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে নতুন করে মৌলিক কিছু কাজ করার সুযোগ করে দেয়।
আমার সাথে জামিল আলিম, শামস এবং চারপাঁচ জন সহকারী প্রকৌশলী দিয়ে সঞ্চালন পশ্চিম শাখা স্থাপন করা হয়। আমাদের এলাকা ছিল ডেমরা থেকে ফেনী পর্যন্ত..তাই ঢাকার তিতাস বিতরণ এলাকার একটি অংশ সহ , কুমিল্লা , চাঁদপুর ,লাকসাম , ফেনী , মাইজদী , চৌমুহুনী এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করার দায়িত্ব নিয়ে পাইপ লাইন এবং স্থাপনা গুলোর অপারেশন পরিকল্পনা করি। পাশাপাশি ডেমরায় ১২০ এমএমসিএফডি ক্ষমতার একটি আধুনিক সিটি গেট স্থাপন কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পাদন করি। বলতে পারি চট্টগ্রাম সিটি গেট স্টেশনের মত ডেমরা সিটি গেট স্টেশনের ভীত স্থাপনে আমাদের ভূমিকা ছিল।
ঢাকায় ফিরে আমার পরিচিত এলাকা মালিবাগ চৌধুরী পাড়া মাটির মসজিদের কাছে ময়না ভাইদের বাসা ভাড়া নেই. কাছে অগ্রজ ক্রিকেটার বন্ধু রকিবুল ভাইয়ের বাসা। আবারো ক্রীড়াঙ্গনে সক্রিয় হয়ে পড়ি।ক্রীড়াজগৎ এবং অন্নান্য পত্রিকায় লেখালেখির পাশাপাশি ক্রীড়া লেখক সমিতির হয়ে ক্রিকেট ,ফুটবল খেলি। এই সময় ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনেক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ক্রীড়া সাংবাদিকতা করি। প্রথম বাংলাদেশ সাফ গেম্স্ উপলক্ষে প্রতিদিন প্রকাশিত Glimpse বুলেটিনে প্রচুর লিখি। জ্বালানী ক্ষেত্র ছাড়াও , ক্রীড়া সংস্কৃতি অঙ্গনেও পরিচিতি গড়ে উঠে।
আমাদের বাখরাবাদ ক্ষেত্র উন্নয়ন করে বাখরাবাদ -চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্যে ছিল চট্টগ্রাম এলাকায় কাফকো এবং সিইউএফএল নাম দুটি সারকারখানা সোহো ,বিদ্যুৎ প্লান্ট এবং শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ। সারকারখানা গুলোর বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়ায় এবং একই সময়ে ঢাকা অঞ্চলে গ্যাস সংকট দেখা দেয়ায় সরকারি নির্দেশে জরুরী ভিত্তিতে বিজিএসএল বাখরাবাদ -ডেমরা ২০ ইঞ্চি বাসের ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মাণ কাজ হাতে নেয়। এডিবির আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়িত এই প্রকল্প ফরাসি ঠিকাদার এসপি কাপ্যাগ ( Spie ক্যাপাগ) নির্মাণ করে. ১২০ এমএমসিএফডি ক্ষমতার এই পাইপলাইন প্রকল্পে দাউদকান্দি , মেঘনাঘাট ,লাঙ্গলবনধ এবং ডেমরায় চারটি বড় ধরণের এইচডিডি (HDD ) নদী ক্রসিং ছিল. মূল পাইপলাইন অধিকাংশ পথসত্ত্ব সড়ক জনপথের রোড বার পরিখার শেষ প্রান্তে অবস্থিত ছিল. বর্ষা মৌসুম এসে পড়ায় পাইপ লাইনের কিছু এলাকায় ঠিকাদার সঠিক গভীরতায় পাইপ লাইন স্থাপন করে নাই.প্রকৌশুলি মাহবুব ভাই এই পাইপ লাইন তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। প্রকল্পটি নির্মাণ কাজ শুরু থেকেই তিতাস গ্যাস একটু অসহযোগিতা করছিলো। ওরা ভাবছিলো তিতাস ফ্রেঞ্চাইজ এলাকায় গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ অধিকার তিতাসের. যাহোক বর্ষা মৌসুমে পাইপ লাইন টেস্টিংয়ের সময় কিছু ত্রুটি দেখা দেয়। আমি শুরুতে আমার টিম নিয়ে পাইপলাইন টেস্টিং কমিশনিং কাজে মনোনিবেশ করি। একটি এলাকায় পাইপ লাইন সিম ত্রুটি থাকায় সেটি প্রতিস্থাপন করা হয়.বর্তমানে সেখানে একটি ডিআরএস স্থাপন করা হয়েছে।
১৯৮৬ নাগাদ বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্র হতে দৈনিক ৬০-৭০ এমএমসিএফডি গ্যাস গড়ে ঢাকা অঞ্চলে সরবরাহ হতে থাকে। ডেমরা সিজিএস নির্মাণের শেষ পর্যায়ে তিতাস গ্যাসের সহকর্মী আজিম ভাই বরাবরের মতো অনেক সহযোগিতা করেছিলেন।
১৯৮৬ সালে আমরা বিজিএসএলের একটি টিম গ্যাস রেগুলেশন এবং মিটারিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের সারে কাউন্টির কাম্বারলি যাই। দলে জামিল, নাজমুল ,শামস, শহিদুল আবেদীন, জয়নাল ভাই সহ গুলজার ভাই ছিল।আমাদের স্যান্ড হার্স্ট মিলিটারি একাডেমির কাছে বেড এন্ড ব্রেকফাস্ট ভিত্তিতে ভাড়া নেয়া একজন পর্তুগীজ মহিলার বাসায় থাকতে দেয়া হয়। ফেব্রুয়ারী মাসের প্রচন্ড শীত। প্রথম দিনে আমাদের শীত এবং খাবার বিষয়ে সতর্ক করা হয়। অধিকাংশ অনুজ সহকর্মীদের উৎসাহে আমরা বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে যাই। আমাদের জানা ছিল গুলজার ভাইয়ের একিউট ডিসেনট্রি আছে। তাই আমরা তার জন্য বিকল্প খাবার নিতে চাইলেও উনি আমাদের সাথে বিরানি খান।রাত উনি পেটের অসুখে আক্রান্ত হন।পরদিন উনি ট্রেনিংয়ে সময় মত যেতে পারেন নি। শুরুতেই আমাদের স্পনসর কোম্পানির প্রধান মিকেল হেড জানান গুলজার ভাই ওদের মতে সংক্রামক একিউট ট্রপিকাল ডিসেন্ট্রি আক্রান্ত। ওনাকে দেশে ফিরে যেতে হবে।আসলে রাতে ওনার রুম এবং টয়লেটে গভীর রাতে বার বার এল জ্বলা দেখে বাড়ির মালিক পর্তুগীজ মহিলা ওনাকে কোয়ারেন্টাইন বন্দি করে ফেলেন। আমাদের সকল প্রচেষ্টায় ওনাকে রাখা যায় নি। ঢাকায় জানিয়ে গুলজার ভাইকে ফেরত পাঠানো হয়। আমাদের প্রশিক্ষণ উপভোগ্য ছিল। গ্যাস \রেগুলেশন এবং মিটারিং বিষয়ে সবাই অনেক কিছু শিখতে পারি। ব্রিটিশ গ্যাসের কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ হয়।লন্ডন মহানগরীর গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা সম্পর্কেও ধারণা পাই। জানতে পারি ওরা শীত মৌসুমে বাড়তি গ্যাস চাহিদা মেটানোর জন্য এলএনজি
ওভারহেড স্টোরেজ সংরক্ষণ করে রাখে. এটি ওদের ফিউচার পারচেজে সুবিধা দেয়।
অবসর সময়ে আমি শামসকে নিয়ে লর্ডস ,ওভাল ক্রিকেট মাঠ , ওয়েম্বলি ফুটবল মাঠ পরিদর্শন করি। এই সময় আমার বন্ধু নাফিস ওর স্ত্রী ফারজানা সহ লন্ডন ছিল। দুজনই বন্ধু বৎসল। ওদের ওখানে একদিন কাটে। স্পনসর কোম্পানি আইজিএ একদিন আমাদের লন্ডন শহরের দর্শনীয় স্থান গুলো ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করে। লন্ডন মিউজিয়াম গুলো আমার কাছে খুব লাগে। বাকিংহাম প্যালেস দেখার সৌভাগ্য হয়। বরফ ঢাকা লন্ডনে আমাদের অবস্থান স্মৃতিময় ছিল।
চলবে।