সালেক সুফী।।
তথাকথিত মখা মহা ঘূর্ণিঝড় মহা আতংক ছড়িয়ে সীমিত প্রভাব বিস্তার করে বিদায় নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের মূলকেন্দ্র শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে মায়ানমারের দিকে সরে যাওয়ায় বড় ধরণের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা পেয়েছে সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ এবং কক্স’সবাজার উপকূল। তবে সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে দেশবাসী মহেশখালী উপকূলে থাকা দুটি এলএনজি সরবরাহকারী ভাসমান টার্মিনাল থেকে সরবরাহ স্থগিত করায়। সারা দেশে তীব্র বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা সহ গ্যাস ফ্রাঞ্চাইজ এলাকায় গ্যাস দুর্ভিক্ষে কষ্ট পেয়েছে ব্যাবহারকারীরা। জানা গেছে স্থানীয় কোম্পানি সামিট পরিচালিত ভাসমান টার্মিনাল যথাস্থানে থাকলেও ,মার্কিন কোম্পানি এক্সেলেরেট পরিচালিত টার্মিনালটি গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ৬০০-৭০০ এমএমসিএফডি এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধস নামে। চট্টগ্রাম এলাকায় গ্যাস সরবরাহ শুন্যের কোঠায় চলে যায়। ঢাকা সহ অন্যান এলাকা মহাসংকটে পরে। জানিনা ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভাসমান টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ স্থগিত করা অপরিহার্য ছিল কিনা। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলছেন একটি টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু করতে ১৫ দিন লাগতে পারে। কিন্তু কেন ? টার্মিনালটি যথাস্থানে ফিরে আসলে সরবরাহ ব্যাবস্থায় সংযুক্ত হতে এতো সময় কেন লাগবে? বিষয়টি জনগণকে জানান উচিত।
যাক সেই প্রসঙ্গ। ক্রমাগত আমদানিকৃত জ্বালানি নির্ভর হতে থাকা বাংলাদেশে জ্বালানি নিরাপত্তা কতটা ঠুনকো সেটি আবারো প্রমান হয়ে গেলো। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল হবার পথের দেশের অর্থনীতি কখনো আমদানিকৃত জ্বালানি নির্ভর হতে পারবে না সেটি দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ , খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছেন। কিন্তু তুলে নি সরকারের মহাজ্ঞানী উপদেষ্টা এবংপরিকল্পনাবিদরা , যার ফলশ্রুতিতে কখনো বিশ্ব জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা, কখনো বৈষয়িক ভুরাজনীতির অশুভ প্রভাব আবার কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জ্বালানি নিরাপত্তা নাজুক হয়ে পড়ছে.২৫০০০ হাজারের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও মূলত জ্বালানি সরবরাহ ক্ষমতার অপ্রতুলতার কারণে চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে জ্বালানি ,বিদ্যুৎ সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। ভুল সিদ্ধান্তে নিজেদের কয়লা সম্পদ মাটির নিচে, দুর্বল ব্যাবস্থাপনার কারণে পর্যাপ্ত গ্যাস তেল অনুসদ্ধান হয় নি জলে স্থলে। আর নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর পরিকল্পনা সবই ফাঁকা বুলি। জ্বালানী বিদ্যুৎ নিরাপত্তা না থাকলে কোন ভরসায় দেশে বিনিয়োগ করবে দেশি বিদেশী বিনিয়োগকারী? কিভাবে বাংলাদেশ অর্জন করবে ২০২৬ ,২০৩০ , ২৯৪১ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভিশন ? এখন কি সরকারের উপদেষ্টারা অনুভব করেন নিজেদের জ্বালানির অনুসন্ধান না করা মহাভুল হয়েছে? প্রযুক্তি বিপ্লবের যুগে কেউকি মহামূল্যবান কয়লা সম্পদ মাটির নিচে ফেলে রাখে? কেন বাংলাদেশ ২০০৯-২০২৩ জলে স্থলে গ্যাস অনুসন্ধানে কার্যকরী ভূমিকা নিলো না ? কেন বঙ্গবন্ধুর স্বনির্ভর জ্বালানি সেক্টরের মূলমন্ত্র ভুলে গেলো?
সবচেয়ে বড় সংকট এখন কয়লা , তরল জ্বালানি, এলএনজি কেনার বৈদেশিক মুদ্রা যোগান দেয়া , দেশে কর্মরত আইপিপি ,আইওসিদের বৈদেশিক মুদ্রায় দেনা পরিশোধ। ২০২৩ শেষ অথবা ২০২৪ শুরুতে আসছে নির্বাচন। জনগণকে জ্বালানী অনিরাপদ অবস্থানে রেখে নির্বাচনে গেলে জনগণ কি করবে? পরবর্তী সরকারকে বিপুল জ্বালানি সংকট নিয়ে হিমশিম খেতে হবে।