দেশের উপকূলে আঘাত হানার এক দিন পরেও ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব কাটেনি। আগামীকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় এই ঝড়ের প্রভাবে দমকা হাওয়া ও প্রবল বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। আজ সোমবার সারা দেশে বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব অন্তত ৪৫ ঘণ্টা থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানার পর ৩৪ ঘণ্টা ধরে দেশের ভূখণ্ডে প্রভাব ফেলেছিল।

সমুদ্রবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের (নোয়ামি) নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে যে কটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেছে, তা উপকূলসহ কয়েকটি এলাকায় প্রভাব রেখেছে। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে থাকছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশবিষয়ক গবেষণা সংস্থা নাসার অধিভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ফাহাদ আল আবদুল্লাহসহ ছয়জন গবেষক বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর ধরন নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদনটি গত বছরের নভেম্বর মাসে জার্নাল অব ক্লাইমেট–এ প্রকাশিত হয়েছে।

এই প্রতিবেদনে গবেষকেরা দেখান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগরের অতি উষ্ণ অবস্থা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করছে। এমন ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে রয়েছে সিডর, আইলা, আম্পান, মোখা, ইয়াস।

ফাহাদ আল আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে জানান, ঝড়ে বাতাসের গতি কমে এলেও এর সঙ্গে প্রচুর মেঘ আসছে, যা ঘূর্ণিঝড়ের পর প্রবল বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। যেমন ঘূর্ণিঝড় রিমাল ২৬ মে (রোববার) সকাল পর্যন্ত ঘণ্টায় ১১ কিলোমিটার গতিতে এগিয়েছে। এর আগে ১৯৯০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঝড়গুলো ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ১৪ কিলোমিটার গতিতে এগিয়েছে। সেই হিসাবে রিমাল তিন কিলোমিটার কম গতিতে এগিয়েছে।

উল্লেখ্য, রোববার রাতে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতি সর্বোচ্চ উঠেছিল ঘণ্টায় ১১১ কিলোমিটার‍।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের বিশেষ এই ধরনের কারণে ক্ষয়ক্ষতিও বেশি হতে পারে বলে দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মনে করছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) প্রাথমিক হিসাবে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের ১০টি জেলার ৮৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৭ লাখের বেশি শিশু এবং প্রায় ৪৩ লাখ নারী রয়েছে।

সরকারি হিসাবে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে দেশের উপকূলীয় ৬ জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৩৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। এই ঝড়ে উপকূলের ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার ১৯ জেলায় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। জেলাগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর।

Please follow and like us:
0
fb-share-icon20
Tweet 20
Pin Share20
7 thoughts on “ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব কাটেনি”
  1. Intriguingly, in contrast to similar S2814 phosphorylation levels in DT and control mice in stress conditions, the baseline phosphorylation level at S2814 in the former was more than twice that in the latter Priligy

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Enjoy this blog? Please spread the word :)

Facebook20
YouTube20
Instagram20
20