সালেক সুফী।।
গ্যাস উৎপাদনে পেট্রোবাংলার উৎপাদন বন্টন চুক্তির অংশীদার মার্কিন কোম্পানি শেভ্রনের গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে দীর্ঘ দিনের। চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক গ্যাস কোম্পানির গ্যাস বিল ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়।৩১ম দিন থেকে ৪% হরে জরিমানার বিধান আছে। এভাবে ক্রমাগত ৬ মাস বিল পরিশোধে বার্থ হলে শেভ্রন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার অধিকার সংরক্ষণ করে। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে ডলার সংকটের কারণে গ্যাস বিল পরিশোধ করতে পারছে না পেট্রোবাংলা।
পেট্রোবাংলাকে আবার এলএনজি আমদানির জন্য ডলার সংস্থান করতে হয়। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে এই অবস্থা একদিনে তৈরী হয় নি। পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলো প্রতিবছর বিপুল পরিমান লাভের হিসাব দিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে লাভের অংশ বন্টন করে। কোম্পানি পরিচালক মন্ডলীর সদস্য হিসাবে সেই লাভের অংশ পান জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাবৃন্দ। জানি সরকার ব্যাংকে গচ্ছিত পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলোর ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে গাছে। এমনকি গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের টাকাও পেট্রোবাংলার হাতে নেই। এমতাবস্থায় কি করবে পেট্রোবাংলা? ২০০৯ -২০২৪ একাধারে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকারের ভুল পরিকল্পনায় বর্তমান অবস্থা।
করোনা বা ইউক্রেন যুদ্ধকে অজুহাত দেয়া যুক্তিহীন। গ্যাস নেই জেনেও কেন গ্যাস সঞ্চালন খাতে বিপুল বিনিয়োগ করে জিটিসিএলকে পঙ্গু করা হয়েছে? কেন গ্যাস বিতরণে বিপুল চুরি সময় মত বন্ধ করা হয় নি? কি পরিকল্পনা করেছে পেট্রোবাংলা ,জ্বালানি মন্ত্রণালয়? সবাই সব কাজ করতে পারে না।২০১০ থেকে এযাবৎ পেট্রোবাংলার শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা সবাই এই ব্যার্থতার জন্য সমভাবে দায়ী। একই দায় বর্তায় জ্বালানি মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি এডভাইজার , জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এবং জ্বালানি সচিবদের উপর।
বাংলাদেশে এখন দৈনিক গ্যাস চাহিদা ৪০০০ এমএমসিএফডি , এর বিপরিতে পেট্রোবাংলা সর্বসাকুল্যে সরবরাহ করছে কমবেশি ২৯০০ এমএম সিএফডি। দেশীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে ২১৭০ এমএমসিএফডি আর দুটি এফেসারু দিয়ে আমদানি হয় ৭৩০ এমএমসিএফডি এলএনজি। নুন আন্তে পান্তা ফুরানো হত দরিদ্র গ্যাস সেক্টর বিদ্যুৎ ,সার ,শিল্প , সিএনজি ,গৃহাস্থলী কোনো খাতের চাহিদা মেটাতে পারে ন।
এর মাঝে ডলার সংকটের কারণে জুলাই ২০২২ থেকে জানুয়ারী ২০২৩ পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ থাকায় গ্যাস সংকট চরমে পৌঁছেছিল। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত গ্যাসের ৬০% সরবরাহ করে শেভ্রন তাদের জালালাবাদ ,বিবিয়ানা এবং মৌলভীবাজার গ্যাস ক্ষেত্র থেকে। এমনিতেই গ্যাস উৎপাদন কমছে প্রতিদিন। ২০১৫ নাগাদ দেশীয় উৎপাদন কমে ২০০০ এমএমসিএফডি হয়ে যেতে পারে। এই সময়ের মাঝে বাড়তি এলএনজি আমদানি সরবরাহের অবকাঠামো গড়ে তোলা যাবে না. বিশ্ব বাজারের দাম বাড়া কমার কথা নাই বা বললাম।
এবার সরকার যখন ২০০৯ -২০২৩ সাফল্যের খতিয়ান তৈরী করবে আমলা নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি সেক্টরের ব্যার্থতা বিশাল আকারে দেখা দিবে।২০২৪ ,২০২৫ ঘনায়মান সংকট থেকে বাঁচতে হলে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার শুন্য করা, দ্রুত গৃহস্থলি এবং সিএনজি খাতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করে কৃচ্ছতা অবলম্বন করতে হবে।পাশাপাশি গ্যাস অনসন্ধান আর উন্নয়নে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।