সালেক সুফী।।
একটি বা দুটি নয় গত কিছু দিন ধরে বারবার ধ্বংসাত্মক আগুন লেগে দোকান এবং ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সমূহ ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। কংক্রিটের বস্তিনগরী ঢাকায় এমনিতেই অগ্নিঝুঁকিতে আছে অসংখ্য বাড়ি ঘর ,ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান , সংকীর্ণ গলির অপরিসর রাস্তা ঘাট , ঝুঁকিপূর্ণ ভাৱে গ্যাস ,বিদ্যুৎ সংযোগ, অপর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি জলাধার ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির সংকট। এতসব সংকট নিয়ে ভূমিকম্পের আতঙ্কে ঢাকাবাসী। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমূহের মাঝে সমন্বয় বলতে কিছু নেই। শুধু দেখা যায় সংকট হলেই সকল সংস্থা একে অন্যকে দোষারোপ করতে ব্যাস্ত। প্রতিটি ঘটনার পর একাধিক তদন্ত কমিটি হয়।যতদিন মিডিয়া সক্রিয় থাকে ততদিন তোড়জোড়। এর পর সবাই সবকিছু ভুলে যায়। অপেক্ষা আরো একটি ঘটনার। অনেকেই আবার রাজনৌতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ আনেন। কিন্তু সমস্যার মুলে থাকা বিষয়গুলো উপেক্ষায় থেকে যায়।সর্বপর্যায়ে সচেতনতা ছাড়া কোনো ভাবেই যে মুক্তি নেই সেটি কেন সবাই বুঝতে পারছে না?
ঢাকা সহ অধিকাংশ নগরীর বহুতল অট্টালিকা নির্মাণে বিল্ডিং কোড উপেক্ষিত থেকেছে , অগ্নিকান্ড ,বা অন্যকোনো দুর্যোগে আটকে পড়া মানুষগুলো বেরিয়ে আসার পথ নেই , একই কারণেই উদ্ধারকার্য সংকটে , ভবনগুলোর অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত। ঢাকা মহানগরে আছে দুজন মেয়র। দুনিয়ার সব মহানগরী গুলোতে মেট্রোপলিটন গভর্নেসের আওতায় সকল সেবামূলক প্রতিষ্ঠান মেয়র কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশে এটি সম্পূর্ণ অনুপিস্থিত। প্রতিটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যেন নিজ নিজ রাজত্বে রাজা। কেউ কারো তোয়াক্কা করে না।নাহলে মারাত্মক অগ্নিঝুঁকিতে থাকা অসংক্ষ ভবন কিভাবে টিকে থাকে ? কিভাবে রাজউক বিল্ডিং কোডের প্রতি ভ্রূকুটি দেখানো অসংখ ভবনকে নির্মাণের অনুমতি দেয় ? কিভাবে আবাসিক এলাকায় অসংক্ষ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে?
সবচেয়ে ভয়ের কারণ ঢাকা মহানগরীর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশংখাজনক ভাবে নিচে নেমে যাওয়া। এমনিটিতেই ভূমিকম্পন সম্ভবা ঢাকা মহানগরী। এখানে মাটির নিচে জালের মতো বেছানো গ্যাস পাইপলাইন। নানাকারণে এগুলোতে শতছিন্ন লিকেজ। মাথার উপর বিদ্যুৎ লাইন। অনেকেই বলেন ৭ -৭.৫ রিকটার মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৭০% বাড়িঘর ধ্বংস হবে। গ্যাস ,বিদ্যুতের আগুনে ঢাকা টাওয়ারিং ইনফার্নো পরিণত হবে।সবার সামনেই ঢাকার জলাশয়গুলো মেরে ফেলা হলো , এখন চার পাশের নদীগুলো দখল করে মেরে ফেলা হচ্ছে। সম্প্রতি দুটি অগ্নিকান্ডে পানির সংকট দেখা গেছে। কাকে দায়ী করবেন? সরকারি সংস্থার কর্মকর্তরা জনগণের পয়সা অপচয় করে বিদেশে হরহামেশা প্রশিক্ষনে যাচ্ছে। মিডিয়ায় বিশেষজ্ঞরা প্রতিনিয়ত বাহাস করছে। প্রতিটি ঘটনার পর দায়িত্বশীলরা বলছেন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কিছুই হচ্ছে না।
এভাবে চললে কিছুতেই সংকট থেকে মুক্তি মিলবে না।
প্রয়োজন সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন ভেঙে ফেলা , পুরোনো গ্যাস পাইপলাইন সমূহে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা। গ্যাস ,বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম তৃতীয় পক্ষের তদারকিতে আনা। আমি মেয়র অফিস গুলোকে অধিকতর অর্থবহ করার জন্য অবিলম্বে মেট্রোপলিটন গভের্নাসে ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে অগ্নিনির্বাপন কর্তৃপক্ষকে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত করার সুপারিশ করছি।পাড়ায় মহল্লায মসজিদ , মন্দির ,গির্জাগুলোকে গণসচেতনা সৃষ্টির কেন্দ্র হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে বলা যেতে পারে। বিষয়টি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিধায় এটি নিয়ে রাজনৈতিক বাহাস বন্ধ হওয়াও জরুরি।