নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
আগামী অর্থবছরে করোনা খাতে কোনও বরাদ্দ থাকছে না। ইতোমধ্যে এই ভাইরাস সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। এ কারণেই নতুন অর্থবছরে করোনা নির্মূল খাতে কোনও বরাদ্দ থাকছে না। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরের বাজেটে ৩৫ হাজার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। এটি চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের তুলনায় পাঁচ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বেশি। এ বরাদ্দ অনেকটাই স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে যোগ হচ্ছে। পাশাপাশি সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের মূল বরাদ্দ থেকে কমানো হয়েছে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে নিট বরাদ্দ থাকছে ৩৫ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। চলতি সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ আছে ২৯ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বরাদ্দ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে নিট বরাদ্দ বাড়ছে পাঁচ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা, জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আলোকে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম আগামী বাজেটে থাকবে। বিশেষ করে চিকিৎসাসেবায় উচ্চ বিনিয়োগ ও উচ্চতর প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবারের বাজেটে। এছাড়া চিকিৎসা-শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা বিজ্ঞানে মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার অবকাঠামো তৈরি ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি আগামী বাজেটে শিক্ষার ব্যয় জনগণের নাগালের মধ্যে রাখা, নার্সিং শিক্ষার আধুনিকায়ন, নার্সিং কলেজ উন্নয়ন, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে রূপান্তর করার কার্যক্রমের ঘোষণাও থাকছে। এছাড়া পরিবার কল্যাণ, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ২০২০ সালের প্রথম থেকে ২০২২-এর শেষদিক পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর অতিমারির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। এই সময়ে জীবন-জীবিকা রক্ষায় স্বাস্থ্য খাত শক্তিশালী ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়। তবে আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন কার্যক্রমকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কারণ, কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে গিয়ে উন্নয়ন খাতে নজর কম পড়েছে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসা শিক্ষায় নিয়োজিত শিক্ষকদের গবেষণা জোরদার করা, বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষার মান নিশ্চিত বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এছাড়া জোর দেওয়া হবে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, চিকিৎসা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সেবার মান নিশ্চিত করা। এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মোট উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ থাকছে ১৫ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। এটি চলতি বছরের তুলনায় ৩ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা বেশি। সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য খাতে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক পুরনো। এ খাতের আওতায় নেওয়া প্রকল্পের বেশিরভাগ প্রকল্প পরিচালক হচ্ছেন চিকিৎসকেরা। গৃহীত প্রকল্পের টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাব আছে। যে কারণে স্বাস্থ্য খাতের টাকা যথাসময় যথাযথভাবে ব্যয় করতে পারেন না তারা। এতে টাকা ব্যয়ে ধীরগতি সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্পের অভিজ্ঞ পিডিদের স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি এ খাতের অর্থ ব্যয় বাড়াতে আরও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা। আগামী বাজেটে যে বরাদ্দ থাকছে, পুরোপুরি সেটি ব্যয় করতে পারবে কিনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, তা নিয়েও সংশ্লিষ্টদের সন্দেহ রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ মহামারি উত্তরণের পর বিভিন্ন হাসপাতাল, চিকিৎসাকেন্দ্র, মেডিক্যাল কলেজের শূন্য পদে লোকবল নিয়োগেও জোর দেওয়া হচ্ছে। কারণ, কোভিড-১৯ মহামারির সময় স্বাস্থ্য খাতে জনবল সংকট বড় আকারে দেখা দেয়। এজন্য পরিচালনা খাতে বেতন-ভাতায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয় করোনা ভাইরাস নির্মূলের টিকা কেনা বাবদ। এর আগের অর্থবছরে রাখা হয় ১০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আগামী বছর এ খাতে কোনও বরাদ্দ থাকছে না। কারণ, ইতোমধ্যে এ ভাইরাস সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের বরাদ্দ বাড়ছে। এ খাতে জনগণের সেবা বাড়বে। এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।’