আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
উপমহাদেশীয় প্রেক্ষাপটে ইমরান খান নি:সন্দেহে একজন ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক হিসেবে ইমরানের যে তুমুল জনপ্রিয়তা ছিল, ইমরান চাইলেই গোলাপ বিছিয়ে দেয়া পথে হাঁটতে পারতেন, যেমনটা হেঁটেছেন আমাদের মাশরাফি। কিন্তু ইমরান ৮৭ সালে পাকিস্তান পিএম জিয়াউল হক আর পরবর্তীতে পিএম নেওয়াজ শরিফের কেবিনেটে যোগ দেয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
সেদিন ইমরানের কণ্টকাকীর্ণ রাস্তা বেছে নেয়ার ফলাফলই হল, আজকের এই গ্রেফতারে জনগণের অভ্যুত্থান। ৯৬ সালে নতুন দল পিটিআই গঠনের পর বহু বছর বাংলাদেশের নৌকা আর ধানের শীষের মতই দুই দলের পাকিস্তানে ৩য় দল হিসেবে সুবিধা করতে পারেনি পিটিআই। কিন্তু ইমরান পুরোই অনমনীয় আর আপোষহীন ছিলেন। যার ফল হিসেবে দল গঠনের ২২ বছর পর ঠিকই প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান। যদিও পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পারেননি, গতবছর আস্থা ভোটের নামে গদিচ্যুত করা হয় ইমরানকে।
লংমার্চে গু-লি খেয়েও দমে যাননি, পাকিস্তানের পুলিশ বাহিনী চেষ্টা করেও গ্রেফতার করতে পারেনি, ১৩১ টা মামলা হয়েছে… তবুও ইমরানের দৃঢ় অবস্থানের নড়চড় হয়নি।
রক্তের কোন সম্পর্কের প্রয়োজন হয়নি, গডফাদারের কোন হাতের দরকার হয়নি, ইমরান হেঁটেছেন আর তার পিছনের ছায়া দিন দিন লম্বা হয়েছে। এক ডাকে রাস্তায় নেমে এসেছে পাকিস্তানের লাখ লাখ নারী-পুরুষ। নির্ভয়ে সেনা-নিবাসে পর্যন্ত হামলা করেছে। গু-লির মুখে প্রাণ দিয়েছে অনেকে, ১৪৪ ধারায় প্রতিবাদ প্রতিরোধ করে আহত হয়েছে কয়েক হাজার৷
৩০ বছর পেরিয়ে গেছে তবু ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুসরা তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারাননি, সোশাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করেছেন অকুতোভয়ে। পাশে দাঁড়িয়েছেন শহিদ আফ্রিদি, শোয়েব আখতার আর মো: হাফিজরা।
পাকিস্তানের জনগণ অবশ্য এমনিতেও চরম হতাশায় ভুগছিল। মূল্যস্ফীতি, ডলারের উচ্চহার, রিজার্ভ তলানিতে, বৈদেশিক ঋণ ফেরতে অক্ষমতা, অর্থনৈতিক দুর্দশা… সবকিছুর সাথে যোগ হয়েছে ওদের আশাভরসার আশ্রয়স্থল ইমরানের এই গ্রেফতার, তাই ফুঁসে উঠেছে সবাই।
সবচেয়ে বেশী নম্বর অবশ্য পাবেন পাকিস্তানের বিচার বিভাগ যারা নির্দলীয় অবস্থান ধরে রেখে এই গ্রেফতারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং দুই সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনও দিয়েছে। বোঝাই গেল ওদের বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ হতে আলাদা।
মুসলিম বিশ্বে ইমরানের মত এরকম প্রভাবশালী আর জনপ্রিয় নেতা এই মুহুর্তে খুব বেশী নেই৷ হয়ত তুরস্কের এরদোয়ানকে এই মাপের বলা যেতে পারে।
ইমরান ক্রিকেটে সফল হয়েছেন, ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরিতে সফল হয়েছেন এবং বেঁচে থাকলে রাজনীতিতেও সফল হবেন, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।