সম্পাদকীয় কলামিষ্টঃ ডাঃকামরুল আহসান
লিখতে মন চায় অনেক কিছু কিন্তু সময়ের অভাবে লেখা সম্ভব হয় না তবুও সময় পেলে যতটুকু পারি লেখার চেষ্টা করি । আমার মরহুম আব্বা ও আম্মা দুজনেই ইনকাম করতেন।ওনাদের ব্যয়ের খাত আমার মুখস্থ ছিলো- যেমন শুক্রবার সকালে রাজগন্জ বাজারে ২০০০ টাকা করে চার শুক্রবারে ৮০০০ টাকা। বাকি ৬ দিন ১২০০ করে চার সপ্তাহে ৪৮০০ টাকা। প্রতিদিন ৫০ করে তিরিশ দিনে ১৫০০। মোট খাবার বাজেট ১৫৫০০ টাকা ছিল,যা এই যুগে অসম্ভব।সব কিছুর দাম বাড়লেও মান বাড়েনি।এর সাথে আছে ওজনে কম-বেশি।অতিরিক্ত মুনাফা তার উপর সিন্ডিকেট মানুষের জীবনে টাকা জমানোর কোন অপশন রাখেনি।মানুষের জীবনে সখিনতা একটি বিলাসী প্রজেষ্ট।অনেকটা গরীবের হাতি পালনের মত তামাশা।
গাড়ির বাজেট বেতন তিন হাজার টাকা মাত্র আর তেলে পাঁচ হাজার টাকা মোট ৮০০০ টাকা।শিক্ষা বাজেট মাত্র ১০০০ টাকা।কাজের মানুষ – ২০০০,কারেন্ট ও টেলিফোনে – ৪০০০ টাকা।সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা। লোন বলতে আমার আব্বা একবারই নিয়ে কি পরিমান দুঃখ ও কষ্টে ছিলো ভাষায় বুঝাতে পারবোনা।এক আল্লাহ ছাড়া এই কষ্ট বুঝার শক্তি কেউ রাখে না।
সেই একই ভুল আমিও করেছি লোন পরিশোধ করতে করতে ২০২৭ সাল তাও সব মিলিয়ে ৩০ লাখ টাকা। আল্লাহ তাআলার উপর একশ ভাগ ভরশা করে বসে আছি।। আমার আব্বার বাজেট-৩০ হাজার, আমার ৩ লাখ টাকা এর মধ্যে লোন ১ লাখ বাদ দিলে ২ লাখ।খাবার বাজেট ৩০ হাজার, গাড়ি -৩০ হাজার,শিক্ষা -৩০ হাজার,কারেট-২০ হাজার টাকা। ট্যাক্স,ইন্সুরেন্স,কেয়ারটেকার ৫০ হাজার।মসজিদ মাদ্রাসা দান – ১০ হাজার, সর্বমোট আড়াই লাখ টাকা।এ যেন টাকার অপর নাম তেজপাতা।তারপরেও আল্লাহ এর কাছে শুকরিয়া।
আমার তখন মনে হয় মহান রব্বুল আলামীন সুস্পষ্ট ভাবে আমার পকেটে এ-ই টাকা দান করেন।। নতুবা আমার পক্ষ এতো কামানো অসম্ভব? ডাক্তাররা ডাক্তারদের চরম শত্রু।তারপর তো জনগন,সাংবাদিক, মিডিয়া আছেই। যেই হাসপাতালে চাকরি করি আমার ১৫ বছরের জুনিয়র প্লাস আমার ছাত্ররাও আমার বিপক্ষে,শুধু তাই নয় বেশির ভাগই আমার বিপক্ষে।
সুতরাং প্রতিকূল পরিবেশে ইনকাম করা অসম্ভব একটা বিষয়।। এজন্য আমি শতভাগ মনে প্রানে ও অন্ধভাবে বিশ্বাস করি আল্লাহ তাআলা ই আমাকে চালান। কোটি কোটি শুকরিয়া আদায় করি আল্লাহ তাআলার কাছে। শুকুর আলহামদুলিল্লাহ । আব্বার আমলে কাজের মানুষ, মুহুরিসহ ড্রাইভার বাসায় থাকতো সাথে খাবার ও খেতো।আমার আমলে কেয়ার টেকার বাসার পাশের ফ্ল্যাট এ থাকে। আমার বাসায় আমি ও আমার দুই সন্তান থাকি।
আমার বউ উচ্চতর ডিগ্রি নিতে ঢাকায়। শেষ বছর আনলিমিটেড স্টাডির সাথে রোগীর কাজ। থিসিস নামে মহা ভয়ংকর একটা জিনিস পাশ করা। তারপর কুমিল্লার বাসার প্রতিটি জিনিস এ টু জেড মুখস্ত হয়ে গেছে। কাজের মানুষ ও ড্রাইভার চালানো ঢাকা শহরে বসে কি পরিমান কষ্ট করতে হচ্ছে ভাষায় বুঝাতে পারবোনা শুধু বলা ছাড়া।
গ্রেট লেডী,কঠোর পরিশ্রমী,সেরা ছাত্রী, সেরা মা হিসাবে একটা পুরুষ্কার পাওনা থাকে। সরকার এর কাছ থেকে ও আমার কাছ থেকে।মোবাইল ও প্রযুক্তি বর্তমান জেনারেশন কে সম্পুর্ন ভাবে স্বার্থপর জেনারেশন এ পরিনত করেছে।এর জন্য আমি,আপনি আমরা সবাই দায়ী।দিন যত যাচ্ছে এর অপকারিতার হার বেড়েই চলেছে।পারিবারিক শিক্ষা ও কালচার থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে জেনারেশান জি।আবার আসছে জেনারশান আলফা।সব কিছু মিলিয়ে এই জেনারশান অনেক মেধাবী ও প্রতিবাদী। ৫ আগষ্ট এই জেনারেশান কাপিয়ে দিয়ে সারা বিশ্বে মাইলফলক সৃষ্ট করেছে। যা প্রতিটি প্রজম্মের কাছে আদর্শে হয়ে থাকবে যতদিন বাংলাদেশ থাকবে। বাংলাদেশ শুধু দেশ নয় একটি ইতিহাস।
আত্মীয়তার সম্পর্ক টুকু নাম সর্বস্ব অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বন্ধুত্ব আবার একশ গুন মজবুত ও কাছের হয়ে গিয়েছে আমার আব্বাকে এক নামে কুমিল্লার সবাই চিনতো। এখনো বাবাকে সবাই এক নামে চিনে। উনি আইনজীবী হিসাবে সেরা ছিলেন।বেস্ট টিচার ছিলেন। বেস্ট সমাজসেবক ছিলেন। আমি সমাজ সেবায় নিয়োজিত আছি।টিচার হিসাবে শতভাগ ব্যর্থ , কেননা আমার ছাত্ররাই আমাকে শত্রু মনে করে। মানবিকতার সাথে এ যেন এক কঠিন বৈরিতা।ভালোবাসার মাঝে লবনাক্ততা।ভালো শিক্ষক ছাত্রদের জন্য ক্ষনস্থায়ী লবনাক্ত হলেও পরবর্তীতে স্মরণীয় ও বরনীয় হয়ে থাকে।
প্রফেশন এ শতভাগ মানবিক রোগীর জন্য কিন্তু সার্জন হিসাবে সমালোচিত,হাসির পাত্র।।যা-ই হোক যেহেতু ১০০% আল্লাহ তাআলা কে বিশ্বাস করি।আমি জানি আমার সার্জারীতে কোনো সমস্যা নেই। সুতরাং আমি আমার বিবেকের কাছে মুক্ত। আল্লাহ ও আমার প্রতিটি কাজে বিপদে নিজের কুদরতি হাত দিয়ে সাহায্যে করেন যেটা আমি বুঝতে পারি সবসময়ই।
তাই সবাই সবাইকে বিনীত অনুরোধ রইলো পবিত্র কুরআন মজিদ বুঝে বুঝে বাংলা অর্থ জীবনে একবারের জন্য হলেও শুরু থেকে শেষ অবধি পড়েন। ইনশাআল্লাহ মনের ভিতর যে শান্তি পাবেন। কোটি কোটি কোটি টাকা দিয়ে সেই শান্তি পাবেননা।কোটি টাকার গাড়ি,বাড়ি,নারী লাগেনা,একমাত্র পবিত্র কুরআন মজিদ বুঝে বুঝে অর্থ সহ শুরু থেকে শেষ অবধি পড়েন। এটা সবার কাছে বিনীত অনুরোধ রইলো।