ট্রেনের জানালার পাশে দাঁড়ানো বা সিটে বসাকে কেন্দ্র করে এক যাত্রীর এলোপাতাড়ি লাথি, কিল, ঘুষিতে ঝুমুর কান্তি বাউল মারা যান ৬ জুন। সময়ের হিসাবে তাঁর মৃত্যুর এক মাস পার হয়েছে। তবে শুধু থমকে গেছে ঝুমুর কান্তির পরিবারের সদস্যদের জীবন। পরিবারের হাল ধরা মানুষটির হুট করে মৃত্যুতে মেয়ের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন বিষয়েই কাটছাঁট করতে হচ্ছে।

৪৮ বছর বয়সী ঝুমুর কান্তি বাউলের মৃত্যুর পর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া মেয়ে পৌলমী বাউল এবং ১ বছর ২ মাস বয়সী মৈথিলী বাউলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বাবার জন্য মন খারাপ করায় পৌলমী নিজের খাতায় বাবাকে একটি চিঠি লিখেছে। সেই চিঠিটি ঝুমুর কান্তি বাউলের ছোট বোন স্নিগ্ধা বাউল ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। চিঠিতে পৌলমী লিখেছে, বাবাকে তার খুব মনে পড়ে। তবে সে ভালোভাবে পড়াশোনা করছে, সেটিও বাবাকে জানিয়েছে। আরও বলেছে, ছোট বোন মৈথিলী তাকেই বাবা মনে করেছিল।

ঝুমুর কান্তিরা দুই ভাই, তিন বোন। তাঁদের মধ্যে ছোট বোন ছাড়া সবাই বিয়ে করে যার যার সংসারে থিতু। তবে বাবা–মা থাকতেন ঝুমুরের সঙ্গেই। স্ত্রী, দুই মেয়ে, বাবা-মাকে নিয়ে নরসিংদীতে থাকতেন ঝুমুর কান্তি বাউল। এমনকি ঝুমুরের বৃদ্ধ শ্বশুর–শাশুড়িও তাঁর ওপর কিছুটা নির্ভরশীল ছিলেন।

ঝুমুরের ছোট বোন স্নিগ্ধা বাউল বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের উপপরিচালক। তিনি ঢাকায় থাকেন। স্নিগ্ধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘৭৮ বছর বয়সী বাবা খেতে বসেই ছেলের জন্য হাউমাউ করে কাঁদেন। মা সব সামলাতে গিয়ে পাথর হয়ে গেছেন। দাদার অফিস দুই মাসের বেতন দিয়েছে। দাদার কিছু সঞ্চয়পত্র আছে। আসলে পরিবারটি কীভাবে চলবে, তা ভেবে কূল পাচ্ছি না।’

ঝুমুর কান্তি পরিবার নিয়ে যে বাসায় থাকতেন, তাঁর মৃত্যুর পর সে বাসাটি পাল্টানো হয়েছে। কারণ, পুরো বাসায় তাঁর নানান স্মৃতি। তাই তাঁরা সেটি ছেড়ে শহরের মধ্যে আরেকটি বাসায় ওঠেন।

তবে স্নিগ্ধা বাউল বললেন, ‘নতুন বাসাটিও আবার পাল্টাতে হবে। এই বাসার মালিক ১০ বছর বয়সী পৌলমীর কাছে জানতে চান তার বাবা কীভাবে মারা গেছেন। বাবাকে হারিয়ে এমনিতে অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে। কিন্তু এ ধরনের প্রশ্নে সে ঘাবড়ে গেছে। বাসার মালিক তো এ প্রশ্নটা বড়দের কাছেও করতে পারতেন। স্কুলেও বাচ্চারা পৌলমীর কাছে তার বাবা সম্পর্কে জানতে চায়। সব মিলে আমরা খুব খারাপ পরিস্থিতিতে আছি।’

ঝুমুর কান্তি বাউল ঢাকায় একটি বায়িং হাউসে সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার হিসেবে কাজ করতেন। নরসিংদী থেকে ঢাকায় ট্রেনে যাতায়াত করতেন। প্রতিদিনের মতো ৬ জুন বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন ভোরে। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনের পেছন থেকে দ্বিতীয় বগিতে উঠেছিলেন। ট্রেনে অনেক ভিড় ছিল। নরসিংদী স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার আগেই ট্রেনের যাত্রী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের মঞ্জুর কাদেরের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মঞ্জুর কাদের কিল–ঘুষি মারতে থাকেন। এতে ঝুমুর কান্তি বাউল অজ্ঞান হয়ে ট্রেনের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। পরে ট্রেন থেকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছানোর পর মঞ্জুর কাদেরকে ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন ট্রেনের যাত্রীরা। পরে তাঁকে ভৈরব রেলওয়ে থানায় নেওয়া হয়। এ ঘটনায় ভৈরব রেলওয়ে থানায় ঝুমুর কান্তি বাউলের ছোট ভাই রুমুর বাউল তাঁর ভাইকে কিল–ঘুষি মেরে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন।

মামলাটি তদন্ত করছেন নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ। তিনি আজ শনিবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আসামির বাড়িতে ইনকোয়ারি স্লিপ বা নাম–ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি এখনো। আসামি বর্তমানে নরসিংদী জেলহাজতে আছেন। মামলাটির তদন্ত চলছে।

স্নিগ্ধা বাউল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৌলমীকে তার বাবা কীভাবে মারা গেছেন, তা সেভাবে জানানো হয়নি। আমার ফেসবুকে যা লিখি, সে তা পড়তে পারে। তাই সে হয়তো সবই বুঝতে পারছে। চাপা স্বভাবের বলে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কিছু বলে না। মনের মধ্যে কষ্ট চেপে রাখে।’

স্নিগ্ধা জানালেন, দাদা মারা যাওয়ার পর পৌলমীর কোচিং বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তবে কোচিংয়ের শিক্ষক এই পরিস্থিতিতে পৌলমীর জন্য মাত্র ৫০০ টাকা নেবেন বলে জানিয়েছেন। তাই হয়তো আবার সে কোচিংয়ে যাওয়া শুরু করবে। বউদিকে ব্যস্ত রাখা এবং কিছু যদি আয় করা সম্ভব হয়, তাই তাঁকে সেলাই শেখানোর ক্লাসে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে। দাদার মৃত্যুতে একদিকে শোক, অন্যদিকে পরিবারটি কীভাবে চলবে, এখন সেটাই যেন বড় প্রশ্ন, বলতে বলতে দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন স্নিগ্ধা।

Please follow and like us:
0
fb-share-icon20
Tweet 20
Pin Share20
984 thoughts on “১০ বছর বয়সী মেয়ের কাছে জানতে চান তার বাবা কীভাবে মারা গেছেন”
  1. После ухода из жизни близкого человека мы обратились в https://complex-ritual.ru/. Сотрудники проявили предельное сочувствие и такт, взяв на себя все сложные вопросы организации похорон. Они помогли подобрать достойный гроб, оформить документы, организовать отпевание и захоронение. Услуги оказаны на высоком уровне, по разумным ценам. Благодарим за помощь в это тяжелое время. Советуем эту компанию в Казани как надежного партнера в ритуальной сфере.

  2. Привет! Хотите всегда быть в курсе самых выгодных займов? Наш канал поможет вам с этим. Мы отбираем только лучшие МФО, где можно быстро получить деньги на карту. Займы без отказов, удобные условия и прозрачные тарифы – все это у нас. Подпишитесь и получите доступ к актуальным предложениям от проверенных микрофинансовых организаций. Решайте финансовые вопросы легко и быстро!