সালেক সুফী।।
বছর শেষে ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন। অংশগ্রহণকারী ,স্বচ্ছ , বিশ্বাষযোগ্য নির্বাচনের দাবি উঠেছে দেশ বিদেশে সর্বত্র। প্রধান বিরোধী দল গুলো বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে আসতে অনাগ্রহী হয়ে আন্দোলন করছে নির্দলীয় অন্তর্বর্তী কালীন সরকার গঠনের দাবিতে। যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা শক্তিগুলো সকল দলের অংশগ্রহণে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পরামর্শ দিতেছে অহরহ। সরকার কিন্তু পরিবর্তিত কনস্টিটিউশন ধারা অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ঠিক এমনি অবস্থায় নির্বাচন হতে চলেছে ৬ টি ( গাজীপুর ,সিলেট, রাজশাহী ,খুলনা , বরিশাল ,কক্স’সবাজার ) মেয়াদ উত্তীর্ণ পৌরসভার। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন গুলো সরকার বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা বলে মনে করছে সচেতন মহল।
প্রধান বিরোধী দল তাদের ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনে প্রার্থী না দিলেও পার্টি এক্টিভিস্টরা নানা ভাবে নির্বাচনে সম্পৃক্ত আছে বলে প্রতীয়মান। সরকারি দল রাজশাহী ,খুলনা সিটি কাউন্সিলের বর্তমান মেয়রদের অপরিবর্তিত রাখলেও পরিবর্তন এনেছে সিলেট , কক্স’স বাজার , বরিশাল এবং গাজীপুর সিটি কাউন্সিল মেয়র পদে. সরকার প্রধান নানা ভাবে তথ্য সংগ্রহ করেন প্রার্থীদের বিষয়ে। নানা বিবেচনা করেই তিনি প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। এবারের মনোনয়ন নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে বরিশাল এবং কক্স’স বাজার বর্তমান মেয়র পরিবর্তন নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী পরিবারের ঘনিষ্ট আত্মীয় প্রভাবশালী আবুল হাসনাত আব্দুল্লার পুত্র সাদিক আবুদুল্লাকে পরিবর্তন করে তার চাচাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দৃশ্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বরিশালে শাসক দলের স্থানীয় অঙ্গ সংগঠন। কক্স’সবাজারের প্রতাপশালী মেয়রকে নিয়ে পুরো মেয়াদেই আলোচনা ছিল।তাকে পরিবর্তন করে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে অনেকটা দলীয় প্রধানের একক সিদ্ধান্তে। একই ভাবে সিলেটে বেশ কিছু আগ্রহী প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিয়ে বেছে নেয়া হয়েছে যুক্তরাজ্য প্রবাসী একজন দলীয় নেতাকে। এই তিন সিটিতে জয় পেতে শাসক দলকে এখন নিজেদের দলীয় ক্যাডারদের প্রথম সামাল দিতে হবে।এদিকে গাজীপুরে সমস্যা বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীরকে নিয়ে। যদিও ঋণ খেলাপি অজুহাতে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে তথাপি আপিল করে উনি ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। জাহাঙ্গীর অথবা তার মা প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে থাকলে বিরোধী দলের সমর্থনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবেন। ইতিমধ্যেই গাজীপুর নির্বাচনে নির্বাচন বিধি ভঙ্গের জন্য দুইজন মন্ত্রীকে লিখিত ভাবে সতর্ক করেছে নির্বাচন কমিশন।
রাজশাহী সিটিতে নিঃসন্দেহে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছে বর্তমান মেয়রের কার্যকালে। আমি শহর পরিদর্শন কালে দেখেছি একটি পরিচ্ছন্ন সবুজ শহর। তবে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ করে সরকারি দলের ক্যাডারদের বাড়াবাড়ির কথাও শুনেছি। তবু মনে হয়েছে প্রার্থী হিসাবে লিটনের বিকল্প ছিল না। খুলনায় কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা তালুকদার খালেকের সময়ে যতটা কাঙ্খিত ছিল ততটা উন্নয়ন হয় নি।তথাপি বিদ্যমান অবস্থায় খুলনায় খালেকের বিকল্প নেই।পদ্দা সেতু চালু হওয়া খুলনা বরিশাল অঞ্চলের মানুষদের জন্য বিশাল আশীর্বাদ। আমি মনে করি নিজেদের মধ্যে বিবাদ না থাকলে রাজশাহী , খুলনা বরিশালে জয় পেতে শাসক দলের অসুবিধা হবে না।সমস্যা হতে পারে কক্স’সবাজার , সিলেট এবং গাজীপুরে। কক্স’স বাজারে ব্যাপক উন্নয়ন চলছে। সেখানে নানা বিষয়ে বিশেষত প্রকল্প সমূহের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে বর্তমান মেয়র বিষয়ে ব্যাপক অভিযোগ আছে।তথাপি অত্যন্ত প্রভাবশালী বর্তমান মেয়রকে নির্বাচনে মনোনীত প্রাথীর নির্বাচনে সক্রিয় করা না গেলে সমস্যা হতে পারে। সিলেটে গত দুই টার্ম বিএনপির মেয়র ছিল।সরকারি দলের সাংসদ এবং মন্ত্রীরা খুব জনঘনিষ্ট না। প্রার্থীরও খুব জনঘনিষ্ঠতা আছে বলে মনে হয় না। তবুও সরকারি দলের সব ফ্রন্ট একযোগে কাজ করলে জয় পাওয়া যাবে বলে ধারণা।
এখন দেখতে হবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার কি কৌশল গ্রহণ করে। বিশেষজ্ঞ নির্বাচনে কয়েকটি সিটিতে সরকারি দল হেরে গেলেও মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। উপরন্তু নির্বাচন বিষয়ে জনগণের আগ্রহ সৃষ্টি হবে।স্বচ্ছ নির্বাচন বিষয়ে দেশে বিদেশে আস্থা সৃষ্টি হবে।সরকারকে লাভ ক্ষতির চুলচেরা বিচার করতে হবে।