শীতের মৌসুম চলছে। দেশের চাল, ডাল কিংবা তেলের বাজারে অস্থিরতা থাকলেও কাঁচাবাজারে স্বস্তি ফিরেছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, কাঁচাবাজারে শীতকালীন সবজিতে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যের দাম কমেছে ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। কৃষকরা বলছেন, শুরুর দিকে পণ্যের দাম ভালো পেলেও বর্তমানে উৎপাদন খরচও তুলে আনা কঠিন হচ্ছে।

কাঁচাবাজারের পণ্যের দাম কমাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন ভোক্তারা। বাংলাদেশে সম্প্রতি খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে সাধারণ মানুষ। দুই বছরের বেশি সময় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদেরও। শীতের শুরুতে কিছু কাঁচা সবজির দাম বেশি থাকলেও চলতি মাসে তা কমে এসেছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ২৬ ডিসেম্বরের তথ্য বলছে, শীতের পরিচিত সবজি লাউ এখন আকার ভেদে ৩০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে, গত বছরের একই দিনে লাউ কিনতে হয়েছিল ৬০ থেকে ৯০ টাকায়। অর্থাৎ এ সবজির দাম কমেছে ৪০ শতাংশ।

রাজধানীর ইব্রাহিমপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতের অধিকাংশ সবজির দামই মাসের ব্যবধানে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে। বাজারের সবজি বিক্রেতাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রায় সব ধরনের সবজির দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। গতকাল বাজারভেদে প্রতি কেজি শিম ৪০-৫০ টাকা, শালগম ৩০, মুলা ২০, টমেটো ৭০-১০০, বেগুন ৪০-৬০ এবং প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এক কেজি কাঁচামরিচের দাম এখন ৬০-৮০ টাকা। লাউ, পেঁপে, পেঁয়াজকলি, বরবটি, মিষ্টিকুমড়া প্রভৃতি সবজির দামও আগের তুলনায় কমেছে।

বগুড়ার আইপিএম কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি বজলুর রহমান আমার দেশকে বলেন, শীতের সবজির ফলন ভালো হয়েছে, সেজন্য সরবরাহও বেড়েছে। তবে শুরুর দিকে বিভিন্ন পণ্যের দামে ভালো লাভ করা সম্ভব হয়েছিল, এখন লাভ তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ভোক্তাদের স্বস্তি এলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা

তবে ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলো মনে করছে, সবজির দাম একেবারেই কমে যাওয়ায় ভোক্তাদের সামান্য স্বস্তি এলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে কৃষকরা উৎপাদনে আশা হারিয়ে ফেলবেন।

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন আমার দেশকে বলেন, সবজির দাম দীর্ঘদিন বেশি ছিল, এ সময় দাম কমেছে। কিন্তু যে পরিমাণ কমেছে তা অনেক কম। এটি অব্যাহতভাবে কমতে থাকলে সর্বসাকুল্যে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কৃষক যদি উৎপাদন খরচ না তুলতে পারেন, তাহলে পরবর্তী সময়ে এ কাজটি করতে চাবেন না।

মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য

সবজি বা কৃষিজাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সবজির ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হলো মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি। তারা কৃষকের পুরো লাভই নিয়ে নিচ্ছে। দালাল, ফড়িয়ারা কৃষকের ক্ষেত থেকেই সবজি নিয়ে আসে। অনেকেই দাদন নিয়ে ফড়িয়াদের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে কৃষকের কাছ থেকে যে পণ্য সে ২০ টাকায় কিনেছে, ঢাকায় তা কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকায়। একদিকে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ভোক্তাদের বেশি টাকায় কিনতে হচ্ছে।

মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি বন্ধ করতে না পারলে কৃষকদেরও বাঁচানো যাবে না এবং ভোক্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন এসএম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, আমরা চাই যাতে ভোক্তাও তার ন্যায্যমূল্য পায়, ভোক্তারাও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, শসার দাম ঢাকার বাজারগুলোয় এখন ৩৫ থেকে ৭০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এ পণ্যের দাম ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ কমেছে বলে ওঠে এসেছে তাদের প্রতিবেদনে।