সালেক সুফী।।
কোনো দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্ব শর্ত হলো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানী নিরাপত্তা। বাংলাদেশ সরকার এই দুইখাতে যেসব মেগাপ্রকল্প নির্মাণে বিপুল পরিমান দেশীয় অর্থ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে ঋণের মাদ্ধমে প্রাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ করেছে। প্রতিটি মেগা প্রকল্প গ্রহণের আগে উপযোগিতা নিরুপনের জন্য বিস্তারিত সমীক্ষা ,ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা হয়েছে বলে মনে করি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের ব্যার্থতার কারণে প্রকল্প বায় এবং বাস্তবায়ন খরচ বেড়ে প্রকল্পের অর্থনৈতিক ইম্পাক্টস পাল্টে দিয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু তাই বলে ঢালাও ভাবে বলার সুযোগ নেই মেগা প্রকল্পগুলো দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে না।তবে করোনা অতিমারী এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব পরিস্থিতি পাল্টে দেয়ায় কিছু প্রকল্পের বিনিয়োগ উদ্ধার করে সমৃদ্ধি অর্জন বিলম্বিত হবেবাংলাদেশকে বিদেশী ঋণ পরিশোধের জন্য নতুন পরিকল্পনা করতে হবে ,জাতীয় পর্যায়ে কৃচ্ছতা পালন করতে হবে।অপ্রোজনীয় নতুন প্রকল্প বর্জন করতে হবে।
মাতারবাড়ী -মহেশখালী বিদ্যুৎ জ্বালানি হাব ,
সবাই জানে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের উপকূল ভাগ অগভীর। ভুরাজনীতির কারণে গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপন সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের। চট্টগ্রাম , মংলা ,পায়েরা বন্দরে মাঝারি ড্রাফটের সমুদ্রগামী জাহাজ ভিড়তে পারে না. একমাত্র মাতারবাড়ীতে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ,৩০০ মিটার প্রস্ত ,১৮ মিটার গভীর সংযোগ খাল খনন করে মাতারবাড়ী -মহেশখালী দ্বীপ দুটিতে জ্বালানী বিদ্যুৎ হব্ গড়ে তোলা তাই অত্যন্ত সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাপান সরকারের সহযোগিতায় এখানে কোল পোর্ট , কোল টার্মিনাল এবং আমদানীকরা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। পরিকল্পনায় আছে এখানে এলএনজি টার্মিনাল ,এলপিজি টার্মিনাল , জ্বালানী তেল সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা হবে. সংযোগ খালের দুই পারে গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। সম্পূর্ণভাবে চালু হলে মাতারবাড়ি মহেশখালী শুধু বাংলাদেশ নয় ভারত , নেপাল , ভুটান সহ এতদ অঞ্চলের বাণিজ্য সহজীকরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। শুধু সতর্ক থাকতে হবে এটি যেন ভূরাজনীতির হাতিয়ার না হয়ে উঠে।কর্ণফুলী নদীর তলদেশের ট্যানেল, চট্টগ্রাম -কক্সস বাজার রেল সংযোগ মাতারবাড়ী বন্দর সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ সহায়ক হবে।আমি মনে করি ২০৩০ হতে শুরু করে ২০৪০ মধ্যে এই মেগা প্রকল্প বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
চট্টগ্রাম -কক্স’স বাজার রেল সংযোগ
প্রকৃত পক্ষে চট্টগ্রাম থেকে কক্স;সবাজার – গুন্ডম হয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যেই এই মেগাপ্রকল্পের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু ভারতের প্রচ্ছন্ন প্রভাবে প্রকল্পটি আপাতত কক্স’সবাজার পর্যন্ত শেষ হচ্ছে। তাই দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তির মাদ্ধমে চীনের বেল্ট এন্ড রোড মহাপরিকল্পনার অংশ না হওয়ায় প্রকল্পিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে কিছুটা ছেদ পড়বে। তবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর চালু হলে এবং মাতারবাড়ী পর্যন্ত রেল যোগাযোগ সম্প্রসারিত হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্নিত হবে।পর্যটকরা অনায়েসে ঢাকা সহ অন্নান্য এলাকা থেকে যাতায়াত করতে পারবে। কক্স’সবাজার ক্রীড়া সংস্মৃতির পাদপীঠে পরিণত হবে।সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে সাগর পারের সুন্দর শহরটি যেন কংক্রিট বস্তিতে পরিণত না হয়।
ঢাকা মেট্রো রেল
বিশ্বের অন্যতম জনবহুল রাজধানী ঢাকার প্রধান সমস্যা অসহনীয় যান জোট। এথেকে উদ্ধার পাওয়ার অন্যতম উপায় হিসাবে জাপান সরকারের সহ্যতায় পর্যায়ক্রমে গড়ে তোলা হচ্ছে ঢাকা মেট্রো রেল। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত আংশিক পথে চালু হয়েছে মেট্রোরেল। যান জোট নিরসনে এর অবদান এখনো দৃশ্যমান নয়।তবে ২০২৩ শেষ নাগাদ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ চালু হলে ভূমিকা দৃশ্যমান হবে বলে বিশ্বাস। একই সঙ্গে আরো কয়েকটি রুটে মেট্রো চালু করার কাজ শুরু হয়েছে। তবে ঢাকায় ভূগর্ভে সড়ক বা রেল নির্মাণ বাস্তব কারণে কতটা উপযোগী সেটি আরো পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি।
এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে
পাবলিক -প্রাইভেট যৌথ উদ্যোগে ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে নির্মাণ কাজ নানা ঘাট প্রতিঘাত এড়িয়ে এখন গতি পেয়েছে। অচিরে বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশ চালু হলে বিমানবন্দর সড়কের দুঃসহ যানজট কিছুটা সহনীয় হবে. ২০২৩ শেষ নাগাদ হয়তো তেজগা পর্যন্ত অংশ চালু হতে পারে। স্মরণ রাখতে হবে ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু করার আগেই যেন গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর বাস রেপিড ট্রানজিট এবং বিমানবন্দর- তেজগাঁ পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেস জিঘ্যে চালু করা হয়।
শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল
জাপানের আর্থিক সহায়তায় বাবস্তবায়িত হচ্ছে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন তৃতীয় টার্মিনাল। প্রকল্পটি বর্তমান স্থানে নির্মাণ কতটা বিবেচনাপ্রসূত সেটি নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু প্রকল্পটি শেষ হলে বিমান যাত্রীদের যাতায়াত অনেক সুগম হবে সন্দেহ নেই। একই সঙ্গে এলেভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে , বাস রেপিড ট্রানজিট , বিমানবন্দর রেল স্টেশনের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ সফরকারী বিদেশী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাংলাদেশে যাতায়াত আরামদায়ক হবে।
আবারো লিখছি প্রকল্প গুলো কিন্তু অধিকাংশ বিদেশী ঋণ নির্ভর। অচিরেই সুদসহ ঋনের কিস্তি পরিষদ শুরু হবে।বাংলাদেশকে কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে. দুর্নীতি এবং অপচয় সর্বত ভাবে নির্মূল করতে হবে।
তৃতীয় পর্বে আরো কিছু প্রকল্প নিয়ে লিখবো।