প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। দাবি আদায়ে গতকাল রাজধানীর শাহবাগসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন তারা। কোটা নিয়ে চেম্বার আদালতে আপিল শুনানির আগের দিন শিক্ষার্থীরা বলেন, রায় পক্ষে না গেলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। কোনোভাবেই শিক্ষার্থীরা বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি মেনে নেবেন না। দাবি আদায়ে রাজপথের কর্মসূচি কঠোর থেকে কঠোর হবে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল দুপুর আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা।

সেখান থেকে শুরু হয় কোটা বাতিলের দাবিতে গণপদযাত্রা। পদযাত্রাটি টিএসসি, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মোড়, মৎস্য ভবন প্রদক্ষিণ শেষে দেড়ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধের মাধ্যমে শেষ হয়। শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে এলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বিপুলসংখ্যক আন্দোলনকারীকে থামানো যায়নি। তারা কোটাবিরোধী বিভিন্ন সেøøাগান দিতে থাকেন।

উত্তেজনা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত পুলিশ রাস্তা ছেড়ে দেয়। শিক্ষার্থীদের অবরোধে ওই এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। অবরোধ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীদের কঠোর হুঁশিয়ারি- রায় পক্ষে না গেলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারী নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা দেড়ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধের পর আজকের মতো কর্মসূচি শেষ করছি। আগামীকাল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা পুনর্বহালের রায় দেবেন। তাই আমরা আগামীকাল বেলা ১১টায় আমাদের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করবো। এ সময় আমরা সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে অবস্থান গ্রহণ করবো। যদি রায় আমাদের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে আমরা নতুন করে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবো। এ সময় আন্দোলনকারীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’- স্লোগান দেন। এ সময় এক মুক্তিযোদ্ধার নাতিও কোটার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অধ্যয়নরত শ্রবণ নামের ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের পূর্ব-পুরুষরা যুদ্ধ করেছিলেন সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার জন্য। মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করার জন্য নয়। ৩০ শতাংশ কোটা কখনো সেই সমতার নিশ্চিত করে না। এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। এটা মেধাবীদের সঙ্গে বৈষম্য। শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা নয়, জেলা কোটা, নারী কোটাসহ সব কোটা বাতিল করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের যৌক্তিক দাবি এ আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, গত ৫ই জুন হাইকোর্টের রায়ের পর থেকে আমাদের আন্দোলন চলমান। আমরা মাঝখানে আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাই আমাদের আবারও রাজপথে নেমে আসতে হয়েছে। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, কোটা নিয়ে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি হবে। আমরা আশা করবো, সেই শুনানি শিক্ষার্থীদের পক্ষে হবে। আমরা যে চার দফা দিয়েছি, তার প্রথম দফা যেন আগামীকালের মধ্যেই পূরণ করা হয়। প্রথম দফা শেষে আমাদের বাকি দফাগুলো যাতে পর্যায়ক্রমে পূরণ করা হয়। আন্দোলনকারীদের চার দফা দাবি তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শারজিস ইসলাম বলেন, প্রথম দাবি, ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগের জন্য একটি পরিপত্র জারি করেছিল। সম্প্রতি হাইকোর্ট তা বাতিল করেছেন, সেটি পুনর্বহাল করতে হবে। আমাদের দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য যৌক্তিক কোটা রাখতে পারবে। তৃতীয় দাবি, যারা কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ পাবেন, তারা শুধু জীবনে একবারই এই সুযোগ পাবেন। আমাদের সর্বশেষ দাবি হচ্ছে, কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের পর যেসব আসন শূন্য থাকবে, সেগুলোতে মেধা তালিকা থেকে নিয়ে পূরণ করতে হবে।