সালেক সুফী।।
কার্বন নিঃসরণ জনিত উষ্ণায়নের কারণে বিশ্ব জ্বালানি ব্যবহার এখন জীবাস্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। বাংলাদেশের কার্বন ফুটপ্রিন্ট সামান্য তথাপি মূলত জীবাস্ম জ্বালানি নির্ভর বাংলাদেশকেও দ্রুত একটি পরিকল্পনার অধীনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে ধাবিত হতে হবে।ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ আবহাওয়া পরিবর্তনের নির্মম শিকার। যখন লিখছি তখন মখা নামের একটি সুপার সাইক্লোন ধেয়ে আসছে বাংলাদেশে মহাতঙ্কের বার্তা নিয়ে। অন্যদিকে নিজেদের জ্বালানি -কয়লা ,গ্যাস উত্তোলনে দ্বিধাগ্রস্ত বাংলাদেশ আমদানিকৃত জ্বালানি নির্ভর হয়ে জ্বালানি নিরাপত্তা অনিশ্চিত করে ফেলেছে। বাংলাদেশের সুযোগ আছে সৌর ,বায়ু বিদ্যুৎ সহ সকল ধরণের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার উলেখযোগ্য পর্যায়ে বাড়ানোর। প্রধানমন্ত্রী নিজে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি। উনি অঙ্গীকার করেছেন ২০৫০ নেট জিরো অর্জনের। বলেছেন বাংলাদেশ ২০৪১ নাগাদ ৪০% বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে সংস্থান করা হবে. প্যারিস সামিটের স্বাক্ষরকারী দেশ হিসাবে বাংলাদেশ এনডিসি জমা দিয়েছে। এনডিসি অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩০ নাগাদ ৫% নিঃসরণ নিজেদের অর্থায়নের এবং ২৫% নিঃসরণ বিদেশী অর্থায়নে কমানোর অঙ্গীকার করেছে। বাংলাদেশের নিজস্ব নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি আছে যেটি পরিবর্তন করা হচ্ছে। ২০১০ ,২০১৬ পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান পরিবর্তনের পর এখন সমন্বিত জ্বালানি বিদ্যুৎ মাস্টার প্ল্যান আইএইপিএমপি হচ্ছে। বাংলাদেশ জ্বালানির টেকসই নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই সকল পরিস্থিতির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে. ২০৩০ উন্নয়নশীল দেশ এবং ২০৪১ উন্নত অর্থনীতির দেশ হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা পরিকল্পনা এবং সঠিক বাস্তবায়ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে. বিশেষত সব ধরণের নবায়নযোগ্য জ্বালানি স্বভাবনা বাস্তবায়ন জরুরি।
আমরা দেখছি নিজেদের জ্বালানি যোগান কমে যাওয়া এবং আমদানিকৃত জ্বালানী ব্যবহারের নানাবিধ চ্যালেঞ্জের কারণে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে। অদূর ভবিষ্যতে ফসিল ফুয়েল নির্ভর জ্বালানি সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নত হবার সম্ভাবনা সীমিত। সরকারের পক্ষে বিপুল পরিমান সাবসিডি দেয়া অথবা জ্বালানি মূল্য বাজার নির্ভর করা কোনোটাই সহজ না. তবে সঠিক পরিকল্পনা করে ৩-৫ বছরের বদ্ধে ৫০০০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়ন যোগ্য খাত থেকে সংস্থান সম্ভব।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সৌর বিদ্যুৎ এবং বায়ুবিদ্যুৎ ,ক্ষেত্রবিশেষে উভয়ের হাইব্রিড। একসময়ের অপেক্ষাকৃত উঁচু খরচের সৌররবিদ্যুৎ টেকনোলজি এখন প্রতিযোগিতা মূল্যে পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের বায়ু বিদ্যুৎ সম্ভাবনা নিয়ে উইন্ড ম্যাপিং সোহো কিছু সমীক্ষা করা হলেও আরো বিস্তারিত সমীক্ষা প্রয়োজন। চরাঞ্চল , দ্বীপ এবং উপকূল এলাকায় বায়ুবিদ্যুৎ সম্ভাবনার কথা ডেল্টা প্ল্যান এবং মুজিব ক্লাইমেট সম্ভাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয় গ্রিড সোলার প্লান্টের জন্য প্রয়োজনীয় জমির অভাব বাংলাদেশে। বাংলাদেশ অন্তত ১০ টি আমদানিকৃত কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ প্লান্ট পরিকল্পনা বাতিল করেছে। মাতারবাড়ি , মহেশখালী , পায়েরা , রামপাল এলাকায় বেশ কিছু জমি গ্রিড সোলার বিদ্যুতের জন্য বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। বিশাল স্বভাবনা আছে ছাদের উপর সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নেট মিটারিং সুবিধা নেয়ার। শিল্প কারখানা সমূহের ছাদ , উঁচু অট্টালিকা , সরকারি হাসপাতাল , অফিস আদালত , শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে একটি বিশেষ পরিকল্পনার অধীনে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমূহ স্বভাবনা রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির মাইক্রো টারবাইন ব্যবহার করে শহর অঞ্চলের উঁচু ছাদে বায়ু বিদ্যুৎ এবং সৌর বিদ্যুৎ হাইব্রিড হতে পারে।
এ বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য গ্রিড বিদ্যুৎ এবং ডিজেল ব্যবহার হয় সেচ কাজে। সোলার সেচ কাজ শুরু হলেও গতি পায় নি বাণিজ্যিক মডেল তৈরী না থাকায়। এখন নেট মেটারিঙের সুযোগ নিয়ে পরিকল্পিত উপায়ে সোলার সেচ ব্যাবস্থাকে গ্রিড সংযুক্ত করা যেতে পারে। সঠিক বাণিজ্যিক মডেল করা হলে সোলার সেচ এবং রুফ টপ সোলার ক্ষেত্রে দেশি বিদেশী ব্যাক্তি খাত এবং উন্নয়ন সহযোগীদের বিনিয়োগ পাওয়া যাবে।
নবায়ন যোগ্য জ্বালানি খাত থেকে দ্রুত সুবিধা পেতে হলে নিম্ন বর্ণিত বিষয় গুলো জরুরি নজর দেয়া প্রয়োজন
নবায়ন যোগ্য জ্বালানি পলিসি , সমন্বিত জ্বালানি বিদ্যুৎ মাস্টার প্ল্যান অবশ্যই এনডিসি ,সরকারের উন্নয়ন ভিশনের সঙ্গে সঙ্গতি পূর্ণ হতে হবে।
স্রেডাকে শক্তিশালী করে ওয়ান পয়েন্ট কন্টাক্ট করতে হবে। এই খাতের কাজগুলোর গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের দক্ষ করে তুলতে হবে।
নবায়ন যোগ্য জ্বালানি খাতকে উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ রেয়াত দিতে হবে।নবায়ন যোগ্য জ্বালানির ট্যারিফ পর্যালোচনা করে তুলনামূলক ফসিল ফুয়েলের কাছাকাছি রাখতে হবে।
সর্বোপরি নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন আন্তে হবে।