সালেক সুফী।।
আমি সিলেট গ্যাস ক্ষেত্রে থাকা অবস্থায় দুই একবার শহরে জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির অফিসে পরিচিত সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম।এছাড়া নিয়মিত যোগাযোগ ছিল কোম্পানির ব্যাবস্থাপক অপেরেশনের সঙ্গে। প্রতিদিন আমি ওনার কাছে বেতার বার্তায় গ্যাস উৎপাদন তথ্য প্রেরণ করতাম। শুনেছিলাম কোম্পানিতে কর্মচারী ইউনিয়নের দৌরাত্ম ছিল।ওরা কোম্পানির কাজে বিঘ্ন ঘটাতো। একদিন শুনলাম ওরা কোম্পানির উর্দ্বতন কর্মকর্তা প্রকৌশুলি আজিজুল হককে প্রকাশ্য রাস্তায় অপদস্ত করেছে। আমি তখন পেট্রোবাংলা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশনের সদস্য হিসাবে ওনার সঙ্গে সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছিলাম। কিছুদিন পর ততকালীন পেট্রোবাংলার পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব) আলী ইমামের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান কমিটি জালালাবাদ কোম্পানীর বিষয়ে তদন্ত করে। মেজর মেহেদী মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর ৯ ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন। আমাকে চিনতেন। শুনেছি ওনার সুপারিশে আমাকে ওই সময় জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানিতে বদলি করা হয়।যদিও ওই সময় কোম্পানিতে বুয়েট অগ্রজ শের খান এবং আব্দুল্লাহ বিদেশ থেকে ফিরে যোগদান করেছিলেন ওনারা চাকুরীর কারণে আমার থেকে জুনিয়র ছিলেন। আমাকে ব্যাবস্থাপক টেকনিকাল কোঅর্ডিনেশনের দায়িত্ব দেয়া হয়। একেএম শামসুদ্দিন ছিলেন কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক। পেশায় খনিজ প্রকৌশুলি মহাব্যবস্থাপক কোম্পানির প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে সফল ছিলেন বলা যাবে না। শহরের কেন্দ্ৰস্থলে একটি বিপনী বিতানের উপরে অবস্থিত কার্যালয়ে কাজের পরিবেশ সুস্থ ছিল না।স্থানীয় রাজনীতির বিশাল প্রভাব ছিল। কোম্পানিতে বিএমডিসির প্রাক্তন কর্মকর্তাদের প্রভাব ছিল। কোম্পানির জুনিয়র স্টোরে কিছু দক্ষ কর্মকর্তা থাকলেও কিছু অদক্ষ ব্যাক্তিত্বহীন উর্ধতন কর্মকতার কারণে কোম্পানির শাহ কর্মদক্ষতা হ্রাস পাচ্ছিলো। কয়েকদিনের মধ্যে মহাব্যবস্থাপক পরিবর্তন হলো। একজন সিনিয়র মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার আসলেন কোম্পানির দায়িত্বে। আমি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে কোম্পানির আঞ্চলিক বিতরণ কার্যালয় সমূহ কারিগরি ভাবে উন্নত করার চেষ্টা নিলাম।
প্রশাসনিক কাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা পেট্রোবাংলার সহায়তায় প্রথমেই সদর কার্যালয় আখালিয়ায় স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেয়া হলো।এতদিনের সুবিধাভোগী কর্মচারী ইউনিয়ন এবং কর্মকর্তাদের এক অংশ বাধা হয়ে দাঁড়ালো। আমার সঙ্গে সিলেটে সক্রিয় জাসদ (ইনু) নেতাদের পরিচয় ছিল। এছাড়া ক্রীড়াঙ্গনের বন্ধুদের মাদ্ধমে বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গেও পরিচয় ছিল।নতুন মহাব্যবস্থাপক খান সাহেবের সঙ্গে বিডিআর কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ট পরিচয় ছিল।তীব্র বাধা এবং অসহযোগিতা সত্ত্বেও আমরা সক্ষম হলাম কার্যালয় স্থানান্তরে। আমি এবং মহাব্যবস্থাপক আম্বরখানা অতিথি বভনে থাকতাম। কিছুদিন আমাদের বিশেষ প্রহরায় অফিস যাতায়াত করতে হতো।
কাছেই ছিল হজরত শাহজালাল ( আর ) মাজার। আমি প্রায় মাজার সংলগ্ন মসজিদে নামাজ পড়তে যেতাম। কয়েকবার হজরত শাহ পরান (আর) মাজার জেয়ারত এবং মসজিদে নামাজ পড়েছি।
আমি মাঝে মাঝে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার , ফেঞ্চুগঞ্জ, ছাতক বিতরণ কার্যালয় পরিদর্শন করে ডিআরএস সমূহের সনাতন মিটার সমূহ তিতাস গ্যাস থেকে ধার করে আধুনিক মিটার দিয়ে প্রতিস্থাপন করি এবং বিতরণ নেটওয়ার্কে ক্যাথোডিক নিরোধ ব্যবস্থা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করি।একসময় মহাব্যবস্থাপক খান সাহেব প্রশিক্ষণে বিদেশে গেলে কিছু সময়ের জন্য তাঁর স্থানে আসেন আমার তিতাস গ্যাসের উর্ধতন সহকর্মী শামুসদ্দিন আহমেদ সাহেব। কারিগরিভাবে দক্ষ মহাব্যবস্থাপক কোম্পানির কিছু মৌলিক পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। কিন্তু উনি আবার ফিরে যাওয়ার পর আবারো কোম্পানির কারিগরি অবকাঠামো আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
আমি মাঝে মাঝে কৈলাশটিলা এবং রশিদপুর গ্যাস কূপ খনন কাজ দেখতে যেতাম। বিশেষত কৈলাসটিলায় মলিকুলার সিভ টার্বএক্সপান্ডার (MSTE ) প্লান্ট এবং এলপিজি এক্সট্রাকশন ফেসিলিটি নির্মাণ কাজে আমার আগ্রহ ছিল।
এই সময়ে পেট্রোবাংলায় চেয়ারম্যান হয়ে আসেন আমার পরিচিত একজন আমলা। ওনার পীর সাহেব জনাব মতলুব একসময় গ্যাস সেক্টরে কাজ করতেন পাকিস্তান সময়ে। পীর সাহেব মাঝে মাঝে স্বপরিবারে সিলেট এসে মাজার গুলোতে সময় কাটাতেন। উনি জালালাবাদ গেস্ট হাউজে থাকার সুবাদে আমার সঙ্গে ঘনিষ্টতা হয়। ঢাকায় ওনার বাসায় একদিন পেট্রোবাংলার তৎকালীন চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে দেখা হয়।ওনাকে আমি ওনার প্রশ্নের জবাবে গ্যাস সেক্টর বিষয়ে আমার জানা বিষয় অবহিত করি।উনি আমাকে প্রশ্ন করেন আমায় বিজিএসএল ফিরে যেতে চাই কিনা। আমি আপত্তি করি নি।
এই সময় বাখরাবাদ -ডেমরা পাইপ লাইন দিয়ে বিপুল পরিমান কনডেনসেট তিতাস বিতরণ লাইনে ঢুকে পরে। পেট্রোবাংলা থেকে শামসুদ্দিন আহমেদকে বিজিএসেলে ব্যাবস্থাপনা পরিচালক করে বদলি করা হয়। আমাকেও একই সঙ্গে বিজিএসেলে ফেরত নেয়া হয়।শেষ হয় আমার ২ বছরের সিলেট এলাকায় কর্ম জীবন। স্বল্প সময়ের অবস্থান হলেও দুটি কোম্পানিতে কিছু মৌলিক পরিবর্তনের সঙ্গী হতে পেরেছিলাম। অনেক নতুন সহকর্মীর সঙ্গে পরিচিতি হয়েছিল। বিশেষ করে গ্যাস অনুসদ্ধান , গ্যাস খুব খনন , উৎপাদন ব্যাবস্থাপনা বিষয়ে অনেক কিছুই সম্পৃক্ত থেকে শিখেছিলাম। পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে গ্যাস সেক্টরে কাজ করার সময় অনেক কাজে লেগেছিলো।
চলবে।