সালেক সুফী।।
জানিনা কতজন জানেন দক্ষিণ পূর্ব বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রথম গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছিল ফৌজদারহাট এলাকায় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে। ওদের রান্না ঘরে বার্ণারে গ্যাস সংযোগ দেয়ার সময় মহসিন ভাইয়ের সঙ্গে আমি এবং গ্যাস সেক্টরে আমার ছায়া সঙ্গী সানোয়ার উপস্থিত ছিলাম। চট্টগ্রাম সিটি গেট স্টেশন ছেড়ে আসতে একটু কষ্ট হচ্ছিলো। কিছু পরিকল্পনা ,কিছু স্বপ্ন ছিল স্টেশনটিকে স্মার্ট স্টেশন হিসাবে গড়ে তোলার। একসময়ে অনেক স্বপ্নসাধ অপূর্ণ থেকে যায়। চট্টগ্রাম পর্ব আপাতত শেষ করার আগে ১৯৮০ , ১৯৯০, ২০০০ দশকে গ্যাস সরবরাহ সিস্টেম সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করি। রিং মেইন সর্বোচ্চ ৩৫০ চাপে গ্যাস পরিবহন ক্ষমতা ৪২০ এমএমসিএফডি। ২০২৩ এসে আনোয়ারা সিজিএস থেকে আর এলএনজি সরবরাহ করায় চট্টগ্রাম CGS কতটুকু কাজে লাগছে জানিনা। আমার মনে হয় না বাংলাদেশ তো নয়ই দুনিয়ার খুব কম গ্যাস বিতরণ সিস্টেম চট্টগ্রামের মূল বিতরণ সিস্টেমের মতো সুবিন্যস্ত ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। রিন্ মেইনের উপর ৫ টি HPDRS ( CGS , নাসিরাবাদ , কালুরঘাট, হালিশহর এবং চট্টগ্রাম ইপিজেড ) গ্যাসের চাপ ৩৫০ -১৫০ কমপ্রেস করতে সক্ষম। HPDRS গুলোকে সহজেই Custody Transfer মিটারিং স্টেশন হিসাবে ব্যবহার করার সুযোগ ছিল। এছাড়া রিং মেইন থেকে সরাসরি গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছিল কাফকো , সিইউএফএল , শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্র সমূহ,( ইস্টার্ন রিফাইনারি – চট্টগ্রাম স্টিল – টিএসপি সারকারখানার ) জন্য CRS , উসমানিয়া গ্লাস ফ্যাক্টরিকে। এছাড়া রিং মেইন থেকে ল্যাটারাল লাইন নির্মাণ করে KPM এবং KRM কে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। HP DRS গুলো ১৭ টি IP DRS মাদ্দমে গ্যাস প্রেসার ১৫০ পিএসআই থেকে ৬০ পিএসআই কমপ্রেস করে। চট্টগ্রামের বাদবাকি গ্রাহক ৬০ পিএসআই লাইন থেকে গ্যাস গ্রহণ করে।IP DRS গুলোতেও আধুনিক মিটার বসানোর সুযোগ ছিল। জানিনা আমাদের পরে সঞ্চালন পশ্চিমের চৌকষ ব্যাবস্থাপকরা বা চট্টগ্রাম বিতরণ কার্যালয় কেন এই উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই।
মুঈনুল আহসান সাহেব চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় বিতরণ কাজ সুষ্ঠু ভাবে চলে। কিন্তু উনি মহাব্যবস্থাপক হয়ে কুমিল্লা চলে আসার পর ব্যাবস্থাপক হিসাবে যারা ছিলেন তাদের না ছিল কারিগরি গান না ছিল ব্যাবস্থাপনা দক্ষতা। কিছু অতি স্মার্ট কারিগরি অফিসার সুযোগ বুঝে নানা ভাবে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়ে বিপুল কালো অর্থ উপার্জন করে। কিছু সময়ের মাঝে কিছু অসৎ কর্মচারী গ্যাস চুরিতে জড়িয়ে পরে। বিজিএসএলের চট্টগ্রাম বিতরণ এলাকা ১৯৮৬- ২০০০ গ্যাস চুরির অভয় অরণ্যে পরিণত হয়। কিছু স্মার্ট অফিসার গ্যাস চুরির অর্থে বিত্তশালী হয়ে প্রবাসে স্থায়ীভাবে চলে যায়। কয়েকজন কর্মকর্তা অবৈধ পথে অর্জিত অর্থ ভারতে পাচার করেছে বলে অভিযোগ আছে।কষ্ট লেগেছিলো জেনে কষ্ট পেয়েছি কিছু উর্ধতন কর্মকর্তাও গ্যাস চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল। বিজিএসএল সিস্টেম অভিনব বলে চুরির ধরণ ছিল অভিনব। জানিনা উচ্চ শিক্ষিত মানুষদের বিবেক দংশন করতো কিনা। আমি ভীষণ ভাবে লজ্জিত ছিলাম।
পরবর্তীতে ১৯৯২ ,১৯৯৩ বিজিএসএলের ভিজিল্যান্স টিমের প্রধান হিসাবে কাজের সময় অনেক অবৈধ গ্যাস ব্যাবহারকারী শিল্প কারখানার গ্যাস সংযোগ আমরা কেটে দিয়েছিলাম। প্রতিক্রিয়ায় বিজিএসল কর্মচারী ইউনিয়ন কুমিল্লায আমার অফিস কক্ষে এসে দুর্ব্যবহার করেছিল। এর কিছু দিন পেট্রোবাংলার স্বার্থে আমাকে জিটিসিএলে বদলি করায় আমি বিজিএসএল গ্যাস চুরির শেকড় উপরে ফেলতে পারি নি।
কুমিল্লা অফিসে ১৯৮৩ এপ্রিল থেকে ১৯৮৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কার্যক্রম পরের পর্বে লিখবো।