সালেক সুফী।।
চাকুরী জীবনে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ , বিদেশিরা সব সময় পছন্দ করতো। বন্ধু মহল , খেলার মাঠের সঙ্গীরা , সাংবাদিক বন্ধুরা , সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকারা, এমনকি মন্ত্রী ,সচিবরা অনেক পছন্দ করতো। বাংলাদেশের জ্বালানি মন্ত্রী ডক্টর কামাল হোসেন থেকে শুরু করে এনায়েত উল্লাহ খান, নুরুদ্দিন খান, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম , , একেএম মোশারফ , কর্নেল এনাম এবং এমন কি নাসরুল হামিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে/ছিল। পেট্রোবাংলা আমাকে প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ বা কঠিন দায়িত্ব দিত। কোনোদিন কোনো কাজে বার্থ হয় নি। শুধু হেরে গেছি বিএনপি জামাত সরকারের সময় একটি গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের কাছে। যুদ্ধ করতে পারতাম। কিন্তু তখন দুই ছেলে এবং অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে নাজুক অবস্থায় ছিলাম। আমি কস্মিন কালেও ভাবিনি দেশদ্রোহীর তিলক নিয়ে বাঁচার তাগিদে দেশ ছাড়তে হবে নিঃস্বার্থ ভাবে ২৮ বছর দেশ সেবার পরেও। চোখ বন্ধ করলেই ঢাকা থেকে কাপ্তাই , সিলেট থেকে খুলনা , মাতারবাড়ি থেকে বগুড়া গ্যাস পাইপলাইন এবং স্থাপনা গুলোর অস্তিত্ব অনুভব করি। আফসোস লাগে আফগানিস্তান , তাঞ্জানিয়া , থাইল্যান্ড এমনকি অস্ট্রেলীয় সাধারণ মানুষ থেকে যে ভালোবাসা আদর পেয়েছি। বাংলাদেশ গেলেও কত মানুষ আপ্পায়ন করে। কষ্ট শুধু আমার চাকুরী জীবনের চূড়ায় দেশকে আরো কিছু দেবার সুযোগ বঞ্চিত হয়ে।
ধারাবাহিক বিজিএসএল পর্ব
১৯৮২ বর্ষা মৌসুমে আমি তিন মাসের জন্য নবজাত ছেলে শুভ্র আর রোজির সসাথে থাকার জন্য কুমিল্লা চলে আসি।কুমিল্লা অফিস থেকে পাইপ লিনের পথসত্ম, সেট ওন ওয়েট নির্মাণ তদারকি করি। মাঝে মাঝে ফেনী পরিত্যাক্ত বিমান বন্দরে পাইপ লাইন দুটো করে ওয়েল্ডিং করার কাজ তদারকি করায় গুলজার ভাইকে সহায়তা করি। এই সময়ে আমার পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ সময় দীর্ঘ দিনের সহকর্মী মুঈনুল আহসান সাহেব যোগদান করেন। বেচারার পাইপ লাইন নির্মাণ বিষয়ে খুব একটা অভিজ্ঞতা ছিল না।দেশে তখন সামরিক শাসন। প্রেসিডেন্ট এরশাদ স্বয়ং পাইপ লিনের অগ্রগতি মনিটরিং শুরু করেন। ডেপুটি চিফ মার্শাল এডমিনিস্ট্রেটর ফেনীর বাসিন্দা হওয়ায় আমাদের অনেক সুবিধা হয়।আমরা নোকাহালি অঞ্চলের এডমিনিস্ট্রেটর ব্রিগেডিয়ার রব্বানী এবং কুমিল্লার ব্রিগেডিয়ার আমসা আমিনের কাছ থেকেও অনেক সহায়তা পাই। দুজনই ফৌজিয়ান এবং মহসিন ভাইয়ের পরিচিত। সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ ইতালমুন্তাজি সীতাকুণ্ডের পাহারের ঢালে কনস্ট্রাকশন ক্যাম্প স্থাপন করলে আমরা পরামর্শকদের সঙ্গে চলে যাই. আবেদীন , গুলজার ভাই এবং আমি তিন জন বিজিএসএল তিনটি টিমের দায়িত্বে ছিলাম। শাহাদাৎ ভাই সিটি গেট স্টেশনের দায়িত্বে। আবেদিনের সঙ্গে ছিল জামিল, গুলজার ভাইয়ের সঙ্গে আমজাদ ,আমার সঙ্গে নাজমুল। ক্যাম্পে বিদেশী পরামর্শক এবং বিদেশী ঠিকাদার সহ ২০০ মানুষ ছিল।ফৌজদারহাট থেকে কুমিল্লা মুরাদনগর থেকে সাজ সাজ রব পরে যায়।আমার কাজ ছিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে। তাই প্রতিদিন আমাকে কমপক্ষকে ১০০ কিলোমিটার ঘুরে ঘুরে কাজ দেখতে হতো।আমার অনুজ প্রকৌশুলি নাজমুল পরে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী হয়ে মেলবোর্ন তাকে। আবেদীন অবসর নিয়ে একটি গ্যাস কোম্পানিতে চাকুরী রাত। গুলজার ভাই কানাডার ক্যালগারিতে প্রবাসী হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। শাহাদাৎ ভাই টরেন্ট প্রবাসী। জামিল পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) হিসাবে অসহ্র গ্রহণ করে।শুনছি অসুস্থ। আমজাদ অসহ্র গ্রহণ করেছে। পরবর্তীতে মুস্তাফিজ এবং সানোয়ার চৌধুরী আমার সাথে কাজ করে। োর দুজন পেট্রোবাংলার পরিচালক হিসাবে অবসর গ্রহণ করে বাংলাদেশে আছে। একসময় মাহবুব জামাল আমার সাথে ছিল। জানিনা এখন কোথায়।
প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে আমরা সদল বলে ক্যাম্প ট্যাগ করে কাজে যেতাম ক্যাম্প থেকে স্যান্ডউইচ , ফ্রাইড চিকেন, প্রচুর ফলমূল এবং কোমল পানীয় নিয়ে ,রোদ ,বৃষ্টি বাদল উপেক্ষা করে সারাদিন নেশার মতো পাইপ লাইন কাজ করতাম। সীতাকুণ্ড , মিরেরসরাই এলাকার পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো অতিক্রম করা ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ। পাইপলাইন নির্মাণ কাজে দুনিয়ার কিছু সেরা ওয়েল্ডার , ওয়েল্ডিং ইন্সপেক্টরের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। কয়েকজনের নাম না বলে পারছি না। জিম ডুনান্ট , ডেভিড গুম্বলি , রয় বুৰেল আমাকে পাইপ লাইনার হিসাবে আমাকে পরিণত করে। ঠিকাদার কিন্তু পাইপ লাইন লেয়িং শুরু হবার আগেই ২০% বিল চুক্তি অনুযায়ী তুলে নিয়েছিল। ১০% অগ্রিম ,১০% মোবিলাইজেশন। এক পর্যায়ে ইটালিয়ান মালিকের সঙ্গে দফা রফা করে কেবিআহমেদ বেক্সিমকোর সালমান রহমানকে সঙ্গী করে পাইপলাইন নিরাম দায়িত্ব গ্রহণ করে। ইতালিয়ানদের পাশাপাশি একঝাঁক আইরিশ এবং ব্রিটিশ কর্মী যোগদান করে কাজের গতি বাড়িয়ে দেয়। শুনতে পাই কর্মীদের সঙ্গে ঠিকাদারের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। দৃঢ় চেতা মহসিন ভাই তড়িৎ সিদ্দান্ত নিয়ে প্রায় ৬০ জন বিদেশী কর্মীকে প্রজেক্ট থেকে বিদায় করেন, সঙ্গে বিদায় করেন আমাদের পরামর্শক দলের নেতা রয় বুৰেল কে. দুমাস সময়ে পাইপলাইন অগ্রভাগ ফেনী পৌঁছে যায়।
চলবে।